ঢাকাশুক্রবার , ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  1. International
  2. অন্যান্য
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উৎসব
  6. খেলাধুলা
  7. চাকুরী
  8. জাতীয়
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম
  11. পরামর্শ
  12. প্রবাস
  13. ফরিদপুর
  14. বিনোদন
  15. বিয়ানীবাজার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অবাধ্য আদ ও সামূদ জাতীর ধ্বংস,আমাদের জন্য শিক্ষা:আবু নাঈম মু. শহীদুল্লাহ্

আবু নাঈম মু শহীদুল্লাহ্
ডিসেম্বর ৫, ২০২৫ ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আদ জাতি, সামূদ জাতি, হুদ আঃ, সালেহ আঃ, উটনি, আদ ও সামূদের শাস্তি, ইসলামের ইতিহাস, কুরআনের কাহিনি, শিরক, অহংকার

অহংকার, অবাধ্যতা এবং পাপাচার কোনো জাতিকে টিকিয়ে রাখতে পারে না—বরং ধ্বংস করে দেয়। আর বিনয়, আনুগত্য ও সততা একটি জাতিকে টিকিয়ে রাখে যুগের পর যুগ।

ইতিহাসের পাতা উল্টালে পাওয়া যায় দুই প্রভাবশালী জাতির কথা—আদসামূদ। তারা ছিল উন্নত সভ্যতার অধিকারী, শক্তিশালী, উচ্চদেহী ও বলবান। কিন্তু আল্লাহর নাফরমানি ও নবীদের অমান্য করার কারণে তারা পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

এই দুই জাতির পতন আজকের পৃথিবীর মানুষের জন্যও গভীর শিক্ষা।


আদ জাতি: অহংকারে অন্ধ এক শক্তিশালী সভ্যতা

আদ জাতির অবস্থান

আদ জাতি বসবাস করত ইয়েমেনের কাছাকাছি আহকাফ অঞ্চলে। এটি বর্তমান ওমান, ইয়েমেন ও রুবুল খালি মরুভূমির সংযোগস্থলে অবস্থিত। তাদের রাজধানীর নাম ছিল ইরাম, যা ধারণা করা হয় বর্তমান উবার/শিসর অঞ্চলের ধ্বংসাবশেষ।

তাদের বৈশিষ্ট্য

  • অস্বাভাবিকভাবে লম্বা, বলবান মানুষ (সূরা ফজর ৬–৮)
  • বিশাল স্থাপত্যশিল্প ও স্তম্ভসমৃদ্ধ নগর (ইরাম)
  • পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ
  • কৃষি–বাণিজ্যে সমৃদ্ধ
  • অন্য জাতির ওপর প্রভাবশালী ক্ষমতা
  • অহংকারে বলত—“আমাদের চেয়ে শক্তিশালী কে আছে?” (সূরা ফুসসিলাত ১৫)

তাদের অপরাধ

  • আল্লাহকে ছেড়ে মূর্তিপূজা (সূরা হূদ ৫০–৫১)
  • নবী হুদ (আঃ)-কে উপহাস ও প্রতিরোধ
  • দুর্বল মানুষের ওপর জুলুম
  • কৃতজ্ঞতার অভাব
  • নিজেদের শক্তিকে সর্বোচ্চ মনে করা

হুদ (আঃ)-এর প্রতি তাদের আচরণ

হুদ (আঃ) তাওহীদের দাওয়াত দিলে তারা তাঁকে—

  • মিথ্যাবাদী
  • পাগল
  • বুদ্ধি বিকৃত
  • সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেয়

তারা হুদ (আঃ)-কে এবং তাঁর অনুসারীদের ওপর খাদ্য ও পানির অবরোধ পর্যন্ত আরোপ করে।

আদ জাতির ধ্বংস

প্রথমে তিন বছর ভয়াবহ খরা নেমে আসে। একদিন আকাশে কালো মেঘ দেখে তারা আনন্দিত হয়—কিন্তু সেটি ছিল শাস্তির ঝড়

  • ঝড় স্থায়ী ছিল সাত রাত ও আট দিন
  • মানুষগুলো খেজুরগাছের গুড়ির মতো উড়ে পড়ে (সূরা আল-হাক্কাহ ৬–৮)
  • প্রাসাদ, স্তম্ভ, নগর সব বালির নিচে বিলীন হয়ে যায় (সূরা আল-আহকাফ ২৫)

হুদ (আঃ) ও তাঁর অনুসারী ছাড়া কেউ বাঁচেনি।


সামূদ জাতি: উটনি হত্যাই ডেকে আনল ধ্বংস

বসবাসের স্থান

সামূদ জাতি বসবাস করত হিজর/মাদায়েন সালেহ অঞ্চলে—যা মদীনা ও তাবুকের মাঝামাঝি। আজও সেখানে তাদের পাহাড় কাটা ঘর দেখা যায়।

তাদের বৈশিষ্ট্য

  • পাহাড় কেটে দৃষ্টিনন্দন ঘরবাড়ি (সূরা আশ-শু’আরা ১৪৯)
  • বলবান, সমৃদ্ধশালী, কৃষি–বাণিজ্যে উন্নত
  • অহংকারে অন্ধ ও শিরকের প্রতি ঝুঁকে পড়া

সালেহ (আঃ)-এর সাথে আচরণ

সালেহ (আঃ)-এর দাওয়াত তারা উপহাস করে প্রত্যাখ্যান করে—

“তুমি তো আমাদের সম্মানিত ব্যক্তি ছিলে! এখন আমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম থেকে ফিরিয়ে দিতে চাও?” (সূরা হুদ ৬২)

তারা তাঁকে পাগল ও মিথ্যাবাদী বলে গালি দেয়।

আল্লাহর উটনি: পরীক্ষা যেখানে তারা ব্যর্থ

তাদের কাছে প্রমাণ হিসেবে আল্লাহ পাঠান এক অলৌকিক উটনি

সালেহ (আঃ) বলেন—
“এটি আল্লাহর উটনি। তাকে কষ্ট দিও না।” (সূরা আশ-শু’আরা ১৫৫)

কিন্তু তারা নির্দেশ অমান্য করে উটনিটিকে হত্যা করে—এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধ।

সামূদ জাতির ধ্বংস

উটনি হত্যার পর তারা সালেহ (আঃ)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে, কিন্তু আল্লাহ তাঁদের রক্ষা করেন।

এরপর আসে শাস্তি—

  • ভয়াবহ ভূমিকম্প
  • বজ্রধ্বনি
  • প্রচণ্ড শব্দে সবাই মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে (সূরা হুদ ৬৭)

শুধু সালেহ (আঃ) ও তাঁর মুমিন অনুসারীরা রক্ষা পান।


কুরআনের সতর্কবাণী

“আর আদ ও সামূদের কাহিনি তো তোমরা জানো। শয়তান তাদের কর্মকে তাদের কাছে শোভন করেছিল, ফলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছিল।”
সূরা আল-আনকাবুত


আমাদের জন্য শিক্ষা

আদ ও সামূদ জাতি ছিল—

  • শক্তিশালী
  • ধনী
  • সভ্য
  • উন্নত

কিন্তু তাদের অহংকার, শিরক, জুলুম ও নবীদের অমান্য—এই চারটি অপরাধ তাদের ধ্বংস করে দেয়।

আজকের পৃথিবীর জন্যও এটি সুস্পষ্ট শিক্ষা—

  • অহংকার মানবজাতির জন্য ভয়ংকর
  • শিরক ধ্বংস ডেকে আনে
  • জুলুম কখনো টেকে না
  • কৃতজ্ঞতা আল্লাহর অনুগ্রহ বাড়ায়
  • ন্যায়পরায়ণতা জাতিকে রক্ষা করে

চলবে…
বই: মানব সভ্যতা—রক্তে লেখা ইতিহাস
লেখক: আবু নাঈম মু. শহীদুল্লাহ্