ঢাকাশনিবার , ১১ মার্চ ২০২৩
  1. International
  2. অন্যান্য
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উৎসব
  6. খেলাধুলা
  7. চাকুরী
  8. জাতীয়
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম
  11. পরামর্শ
  12. প্রবাস
  13. ফরিদপুর
  14. বিনোদন
  15. বিয়ানীবাজার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মুসলমানদের সোনালী অতীত:আবু নাঈম মু শহীদুল্লাহ

আবু নাঈম মু শহীদুল্লাহ
মার্চ ১১, ২০২৩ ৮:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!


পৃথিবীর যেখানেই নির্যাতিত মানুষের আহাজারি, আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হয়ে গিয়েছিল। একটু শান্তির জন্য মানুষ আশ্রয় খুজছিল।সে সকল জায়গায় ইসলাম পৌছলে নির্যাতিত মানুষ গুলো নিজেদের আশ্রয়ের জন্য ইসলামের পতাকা তলে সমবেত হয়েছে। সময়ের ব্যবধানে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোর মধ্য থেকে ইসলামী নেতৃত্ব বাহির হয়েছে এবং ইসলামের নুরকে ছড়িয়েছে সর্বোত্তম পন্থায়।

“মুসলমানদের সোনালী অতীত “সিরিজ ও ধারাবাহিক আলোচনায় আজকের বিষয় আন্দালুসিয়া :

মুসলিম শাসনাধীন মরোক্কর তানজানিয়ার পাশেই স্পেনের সিউটা শহর। সিউটা শহর ভিসিগথ গোত্রের জুলিয়ান নামক একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির নেতৃত্বে চলতো।

সে সময় স্পেনের ক্ষমতায় আসেন আইবেরিয়ান উপদ্বীপ ভিসিগথিক শাসনকর্তা রডেরিক। রডেরিক ক্ষমতায় আসার পর সিউটার শাসনকর্তা জুলিয়ান, নিয়মানুযায়ী , তার কিশোরী কন্যাকে শিক্ষার্জনের জন্য ভিসিগথিক রাজার দরবারে পাঠান।নারী লোভী রডেরিক জুলিয়ানের কন্যার সম্ভ্রমহানি করে।

জুলিয়ান নিজ মেয়ের ধর্ষনের বিচার দাবী করেন বিচার না পেয়ে তানজানিয়ার মুসলিম শাসক তারিক বিন যিয়াদের সহযোগিতার আবেদন করেন। জুলিয়ান মুসলমানদেরকে তার এলাকায় আমন্ত্রণ জানান। মুজলুম মানুষের পাশে দাড়ানো এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার তিনি মুসা বিন নুসাঈর এর পরামর্শে স্পেন আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। জুলিয়ান মুসলিমদেরকে স্পেন ও মরক্কোর মধ্যে অবস্থিত জিব্রাল্টার প্রণালী গোপনে পার করে দেয়ার ব্যাপারে তিনি তারিক বিন যিয়াদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন।

মুসা বিন নুসাঈর এর বিপ্লবী সেনাপতি তানজানিয়ার শাসক তারিক বিন যিয়াদ ৭১১সালের ২৯ এপ্রিল স্পেনের জেব্রাল্টায় সৈন্যদলসহ আগমন করেন।

জিব্রাল্টায় পৌছে তিনি সকল নৌযান পুড়িয়ে দিতে বলেন এবং সৈন্যরা তাই করলেন।
তারিকের সেনাবাহিনীতে মাত্র ৭০০০জন সৈন্য ছিল। তার সাথে মুসা বিন নুসাইর আরও ৫০০০সৈন্য পাঠিয়েছিলেন মোট ১২০০০ সৈন্য নিয়ে রডেরিক এর ১০০,০০০ সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শুরুতে তিনি সৈন্যদের উদ্দেশ্য বক্তব্য দেন। তিনি বলেছিলেন ” হে আমার সৈন্যগণ, কোথায় পালাবে তোমরা? তোমাদের পেছনে সাগর, আর সামনে শত্রু। তোমাদের কাছে আছে কেবল দৃঢ়তা এবং সাহস। মনে রেখো, এদেশে তোমরা সেই এতিমদের চেয়েও দূর্ভাগা যাদের অর্থলোভী মালিকরা তাদের বিক্রি করে দেয়। তোমাদের সামনে শত্রু, যাদের সংখ্যা অগণিত। কিন্তু তোমাদের শুধু তলোয়ার ব্যতীত কিছুই নেই।
তোমরা বেঁচে থাকতে পারবে কেবলমাত্র যদি শত্রুর হাত থেকে নিজেদের জীবন ছিনিয়ে আনতে পারো। তোমাদের সামনে আছে শত্রুকে পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে আনার সুবর্ণ সুযোগ। যদি তোমরা মৃত্যুকে তুচ্ছ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারো তবে জয় নিশ্চিত। ভেবোনা আমি তোমাদের বিপদের মুখে ফেলে পালিয়ে যাব, আমিই সবার সামনে থাকব এবং আমার বাঁচার সম্ভাবনাই সবচেয়ে ক্ষীণ।”

বক্তৃতায় উজ্জীবিত সৈন্য বাহিনীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে কর্ডোভা, গ্রানাডা ও অন্যান্য অঞ্চল জয় করতে পাঠান। এসময় তিনি মূল সেনাদলের সাথে অবস্থান করেন। তারা টলেডো ও গুয়াদালজার জয় করে।

এটা ছিল মুজলুমের জয় ,এ বিজয়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচারের সুচনা হয়। এ বিজয় ছিল মুসলমানদের বিজয় যার সুফল পেয়েছে দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপের মানুষ স্পেন পর্তুগাল সহ আন্দালুসিয়ার সকল জনগন ৭১১ সাল থেকে ১৪৯২ সাল পর্যন্ত। দীর্ঘ ৮০০ বছর শাস কালে মুসলিম শাসকেরা স্পেনের নতুন শস্য প্রবর্তন, দক্ষ সেচ ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং স্থাপত্য, গণিত, চিকিৎসা ও দর্শনের প্রসার ঘটান। যার নিদর্শন এখনো দেখা যায় টলেডো, কর্ডোভা, আলমেরিয়া, আলহাম্বরা ও গ্রানাডায়।
কর্ডোভা শহরের বিখ্যাত মসজিদ কুরতুবা (ক্যাথিড্রাল)খলিফা আবদুর রহমানের সময় (৭৮৪ সালে) নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় মসজিদের আয়তন ও শোভাবর্ধনসহ বিভিন্ন সংস্কার হয়। খলিফা প্রথম আবদুর রহমান নিজ তদারকিতে মসজিদের নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিয়ে যান। খলিফা নিজেও প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে মসজিদের নির্মাণ কাজে শ্রম দিতেন। তার ৩ বছরের শাসনামলে মসজিদটির অবকাঠামো দাঁড় করাতে সক্ষম হন।

৭৮৬ সালে সুলতান প্রথম আবদুর রহমানের মৃত্যুর পর তার ছেলে হিশাম খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তিনিও মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন ও সৌন্দর্য বাড়াতে অবদান রাখেন। ৭৯৩ সালে খলিফা হিশাম মসজিদটির প্রাথমিক কাজ শেষ করেন। প্রাথমিক কাজ শেষ কুরতুবা মসজিদের আয়তন দাঁড়ায় দৈর্ঘ্যে ৬০০ ফুট এবং প্রস্থে ৩৫০ ফুট। খলিফা হিশামের পর উমাইয়াদের সব শাসকই মসজিদের ধারাবাহিক কাজ ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখেন। দশম শতাব্দীতে খলিফা তৃতীয় আবদুর রহমান কুরতুবা মসজিদে পূর্ণাঙ্গ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। আর তাতে মসজিদের আয়তন দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজার ৪০০ স্কয়ার ফুট। ৫০ দরজার এ বিশাল স্থাপনায় রয়েছে ১২৯৩টি স্তম্ভ। নির্মাণের পর মসজিদটি বিশ্বের অন্যতম স্থাপত্যশৈলীর মর্যাদা লাভ করে। ১লাখ ১০ হাজার ৪০০ বর্গফুট আয়তনের মসজিদটির নকশা করেন একজন সিরিয়ান স্থপতি। এর থামের সংখ্যা ৮৫৬টি। এছাড়াও ৯টি বাহির দরজা ও ১১টি অভ্যন্তরীণ দরজা রয়েছে। লাল ডোরাকাটা খিলানগুলো স্মরণ করিয়ে দেয় স্থাপত্যশিল্পে মুসলিম মুন্সিয়ানার কথা। অনিন্দ্য সুন্দর এই মসজিদের থামগুলো নির্মিত হয়েছে মার্বেল, গ্রানাইড, জেসপার ও অনিক্স পাথর দিয়ে। কর্ডোভা মসজিদ নির্মাণে সেকালেই আড়াই থেকে তিন লাখ মুদ্রা ব্যয় করা হয়। পূর্ব-পশ্চিমে এর দৈর্ঘ্য ছিল ৫০০ ফুট। এর সুন্দর ও আকর্ষণীয় মিহরাবটি পাথরের নির্মিত এক হাজার ৪১৭টি স্তম্ভের ওপর। মিহরাবের কাছে একটি উঁচু মিম্বর ছিল হাতির দাঁত ও ৩৬ হাজার বিভিন্ন রং ও বিভিন্ন কাষ্ঠখণ্ডের তৈরি। সেগুলোর ওপর ছিলো- হরেক ধরনের হীরা-জহরতের কারুকাজ। দীর্ঘ সাত বছরের পরিশ্রমে মিম্বরটি নির্মাণ করা হয়। তৈরি করা হয় ১০৮ ফুট উঁচু মিনার, যাতে ওঠানামার জন্য নির্মিত দু’টি সিঁড়ির ছিল ১০৭টি ধাপ। মসজিদের মধ্যে ছোট-বড় ১০ হাজার ঝাড়বাতি জ্বালানো হতো। তার মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি ঝাড়বাতি ছিল রুপার,বাকিগুলো পিতলের তৈরি। বড় বড় ঝাড়ের মধ্যে এক হাজার ৪৮০টি প্রদীপ জ্বালানো হতো। শুধু তিনটি রুপার ঝাড়েই ৩৬ সের তেল পোড়ানো হতো। ৩০০ কর্মচারী ও খাদেম মসজিদের তদারকিতেই নিয়োজিত ছিলেন। মুসলিম বিশ্বের কাছে সুপরিচিত বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ কুরতুবি রয়েছে এ মসজিদের এক গভীর সম্পর্ক। এ মসজিদেই আল্লামা কুরতুবি (রহ.) মুসলিমদের তার রচিত তাফসিরে কুরতুবির পাঠ দিতেন। মসজিদে বসেই ইলমে তাসাউফের দরস দিতেন শায়খুল আকবর সুফি ইমাম ইবনে আরাবি। বাকি ইবনে মাখলাদের মতো ব্যক্তিত্ব এখানে বসেই ‘কালাল্লাহ’ এবং ‘কালার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলতেন৷ হজরত ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া আন্দালুসিও ইলমে দ্বীনের পাঠদান করতেন এ মসজিদে। ইলমে ফিকহের মাসয়ালা-মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করতেন হজরত ইবনে হাজাম জাহেরি।

১২৩৬ সালে ক্যাসলের রাজা তৃতীয় ফার্ডিনান্দ ও রাণী ইসাবেলা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করে স্পেন দখল করে নেয় আর মসজিদটিকে রোমান ক্যাথলিক গির্জায় রুপান্তরিত করে৷ তখন থেকে একে বলা হয় দ্য মস্ক ক্যাথেড্রাল অব কর্ডোভা।