স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন তিন সন্তানের জননী একলিমা বেগম। তিনি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে। ভারসাম্যহীন একলিমা ১৯৮১ সালের কোনো একদিন হঠাৎ নিখোঁজ হন। সে সময় পরিবারের সদস্যরা বহু খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পায়নি তাঁর।
অবশেষে দীর্ঘ ৪১ বছর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে সন্ধান মিলেছে একলিমা বেগমের। বর্তমানে তিনি পাকিস্তানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু কিভাবে তিনি সেখানে গেলেন সে কথা বলতে পারছেন না কেউ। একলিমা শুধু বলতে পারছেন তার বাবা-মাসহ ভাই ও বাংলাদেশের যশোর, তালা, কছিকাটা, কপিলমুনি ও তার নিজ গ্রাম গঙ্গারামপুরের নাম।
বর্তমানে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালীতে পরিবারের সঙ্গে অবস্থানরত একলিমা মৃত্যুর আগে হলেও একবার নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা পোষণ করেন। তার সেই ইচ্ছা পূরণ করতে তার সন্তানেরা একলিমার একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। সেই ভিডিও সাক্ষাৎকারটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যশোরের একটি গ্রুপে পোস্ট করেন তার সন্তানেরা।
যশোরের গ্রুপে পোস্ট করা ভিডিওটি চোখে পড়ে একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে মো. জাকিরায়া শেখের। ভিডিওতে একলিমার বলা নামগুলো তার দাদা-বাবা ও চাচাদের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা করেন এবং ভিডিও দেখিয়ে নিশ্চিত হন যে ভিডিও’র একলিমা বেগমই তার হারিয়ে যাওয়া ফুফু। এরপর তারা পারিবারিকভাবেই ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন একলিমার সঙ্গে।
একলিমা বেগমের ছোট ভাই ইব্রাহিম শেখ (৫০) বলেন, সেসময় আমাদের অনেক অভাব ছিল। স্বামী মারা যাওয়ায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বোনটি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল সেটা তার জানা ছিল না। সে সময় পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি ফেসবুকের মাধ্যমে তার খোঁজ পেয়েছি। বর্তমানে সে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালীতে আছে। তবে কীভাবে তার বোন পাকিস্তানে গেছে সেটা তার জানা নেই। এখন তিনি চান তার বোন তাদের কাছে ফিরে আসুক।
একলিমার বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে মো. জাকিরায়া শেখ বলেন, কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ফুফুর খোঁজ পাই। তারপর থেকে বাড়ির সবার সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে। ফুফুও চান গ্রামের বাড়িতে আসতে। এজন্য তাদের কাছে ইনভাইটেশন লেটার পাঠানো হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দূতাবাস সহযোগিতা করলে তার ফুফু বাংলাদেশে তার গ্রামের বাড়িতে আসতে পারবেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, ফুফুর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তিনি পাকিস্তানের একটি সেল্টার হোমে ছিলেন। সেখানে মুহাম্মদ সিদ্দিক নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরে তারা বিয়ে করেন। মুহাম্মদ সিদ্দিক কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। সেখানে তাদের পরিবারে দুটি ছেলে এবং দুটি মেয়ে রয়েছে। আমরা চাই তারাও এখানে বেড়াতে আসার সুযোগ পাক। এজন্য আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছি।
এদিকে বাংলাদেশে একলিমা বেগমের প্রথম ঘরের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। মেয়ে দুটি এখন স্বামীর সংসারে। আর ছেলে হেকমত আলী ঢাকার একটি কারখানায় কাজ করেন।
মোবাইলে হেকমত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি। উনার কবরটা এখনো আমাদের বাড়ি আছে। বাবার মৃত্যুর পর মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে কোথায় চলে গিয়েছিল তা জানি না। মা আমার বেঁচে আছে কিনা তাও জানতাম না। ছোট বেলা থেকে মায়ের আদর স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। এত বছর পরে মায়ের খবর পাইছি, আপনারা আমার মাকে ফিরিয়ে এনে দেন। আমি তারে সারা জীবন দেখে রাখব।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, ঘটনাটি আমাকে কেউ জানায়নি। তবে এমন ঘটনার বিষয়ে কাজ করার জন্য অনেক সংস্থা রয়েছে। থানায় যোগাযোগ করলে একলিমার দেশে আসার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
