শনিবার তদন্ত কমিটির ডাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক এম সোবহান- সমকাল
শনিবার তদন্ত কমিটির ডাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক এম সোবহান- সমকাল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম সোবহানের শেষ কর্মদিবসে ১৪১ জনের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক থামছে না। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সাংবাদিক নেতার পাশাপাশি নিয়োগ পেয়েছেন উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ নাপিত, তার ফার্নিচার তৈরির মিস্ত্রি, এমনকি তার বাসায় যিনি মাংস দিয়ে যেতেন তার সন্তানকেও চাকরি দিয়ে গেছেন অধ্যাপক সোবহান।
অন্যদিকে অধ্যাপক এম সোবহানের এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে ঘটনার তদন্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে। শনিবার ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে আসেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তারা সংশ্লিষ্ট অনেকের সাক্ষাৎকার নেন। বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানকেও উপস্থিত হয়ে ঘটনার বর্ণনা দিতে হয়।
তদন্ত দলে নেতৃত্ব দেন কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। সঙ্গে ছিলেন- কমিটির সদস্য ও ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. জাকির হোসেন আখন্দ ও ইউজিসির পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান।
তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেই উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। এরপর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিন সহকারী ও উপ-রেজিস্ট্রার এবং রেজিস্ট্রারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি। এরপর বিদায়ী উপাচার্যের জামাতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর শিক্ষক নিয়োগ পাওয়া বিভাগের সভাপতিদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কমিটি।
পরে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়। তাদের সঙ্গেও দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের মুখপাত্র অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম টিপুর নেতৃত্বে সাক্ষাৎকার দিতে আসে একটি প্রতিনিধি দল।
পরে অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে দুই বছর ধরে আন্দোলন করছি। কমিটি আমাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে যা যা তথ্য চেয়েছে সেভাবে সহায়তা করেছি।’
বিকেল ৩টায় উপাচার্য দপ্তরে আসেন বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। এক ঘণ্টার বেশি তিনি তদন্ত কমিটির মুখোমুখি ছিলেন। বের হয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে করতে দুই বছর আগে এই নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। হঠাৎ নিয়োগে স্থগিতাদেশ আসে। এই নিয়োগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজ মুখ থুবড়ে পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছেলেরাও নিয়োগ দাবি করছিলো। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়োগ দিয়েছি। আমার কাছে মনে হয় তাদের একটা চাকরি দরকার, তাই দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করেছে, তারা কি একটা তৃতীয় শ্রেণির চাকরি পেতে পারে না? আমি ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মানুষকে চাকরি দিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘উপাচার্যকে অধ্যাদেশে অ্যাডহকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে। নিয়োগ অবৈধ হবে কেন? নিয়োগ অবৈধ হতে হলে আগে আইন সংশোধন করতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী উপাচার্য বলেন, ‘তাদের নিয়োগ কে বাতিল করবে? সরকার? এমনটি হয়তো করবে না। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্যের ক্ষমতায় চাকরি দেওয়া হয়েছে। এর আগেও বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ৫৪৪ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এমন নিয়োগ আরো হয়েছে, কিন্তু সেগুলো বাতিল হয়নি।’
এদিকে তদন্ত কমিটির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘১৪১ জনকে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগ শতভাগ অবৈধ। তাই আমি এতে স্বাক্ষর করিনি। অন্যকে দিয়ে স্বাক্ষর করানো হয়েছে।’
নিয়োগ কাণ্ডে সহযোগিতাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষদ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন উর রশীদ বলেন, ‘আমি উপাচার্যের আদেশে কাজ করেছি। তিনি আদেশ করেছেন তাই কাজ করেছি। তদন্ত কমিটি ডেকেছে, আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি তাদের সামনে।’
তদন্তের বিষয়ে কমিটির প্রধান ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রণালয় এটিকে অবৈধ নিয়োগ উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছে। নিয়োগের সঙ্গে যারা জড়িত আজকে সকলের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাত কর্মদিবস সময় দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই আমরা প্রতিবেদন জমা দেবো।’
তিনি আরো বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এখানে সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকুক এবং ঐতিহ্য বজায় থাক সেটি আমরা চাই। তাই সবকিছু খোঁজ নিয়েই সঠিক প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
সূত্র:সমকাল