ঢাকাশনিবার , ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
  1. International
  2. অন্যান্য
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উৎসব
  6. খেলাধুলা
  7. চাকুরী
  8. জাতীয়
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম
  11. পরামর্শ
  12. প্রবাস
  13. ফরিদপুর
  14. বিনোদন
  15. বিয়ানীবাজার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জোট ছেড়ে সবল হতে চায় জাতীয় পার্টি

অনলাইন ডেস্ক,দৈনিক ডাক বাংলা ডটকম
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১ ১:২২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সরকারের সঙ্গ ছেড়ে সত্যিকার অর্থে বিরোধীদলীয় অবস্থানে যেতে চাইছে জাতীয় পার্টি। দলটি মনে করছে, সংসদের বিরোধী দলে থাকলেও সত্যিকার অর্থে ‘বিরোধী দলের’ ভূমিকা তারা পালন করতে পারছে না। বরং বেশির ভাগ সময় সরকারি দলকে সমর্থন করতে গিয়ে জনমনে কার্যত তারা সরকারের ‘বি টিম’ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এতে রাজনৈতিকভাবে জাপা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দলের আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য জনমনে থাকছে না।

দলের নীতিনির্ধারকদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে আস্তে আস্তে মানুষের কাছ থেকে দূরে চলে যাবে জাতীয় পার্টি। জনগণের মধ্যে একসময় কোনো সমর্থনই থাকবে না। এ কারণে সংসদ থেকে পদত্যাগ না করেই আস্তে আস্তে সরকারের গণ্ডি থেকে বের হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দলটি।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার দলটির সংসদ সদস্যদের সভা ডেকে এমন পরিস্থিতির কথা ব্যাখ্যা করেছেন পার্টির নীতিনির্ধারকরা। দলের বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ (জি এম কাদের) মোট ১৮ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সদস্য না হলেও মহাসচিব হিসেবে ওই সভায় বক্তৃতা করেন জিয়া উদ্দীন আহমেদ বাবলু। অসুস্থ থাকায় প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ততার কারণে কাজী ফিরোজ রশীদ সভায় উপস্থিত ছিলেন না।

সভায় দেওয়া বক্তব্যে জি এম কাদের ও মহাসচিব জিয়া উদ্দীন বাবলুসহ বেশির ভাগ সদস্য সরকারের সঙ্গ ছেড়ে সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা উচিত বলে মত প্রকাশ করেন। তাঁরা এ বিষয়ে দলের সংসদ সদস্যদের দিকনির্দেশনা দেন, যাতে তাঁরা সরকারি দলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা না বলেন। দু-একজন সদস্য মহাজোটের শরিক হওয়ার সময় সরকারি দলের সমর্থন নেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করলেও বিরোধীদলীয় অবস্থানে যাওয়ার বিষয়ে তাঁরা দ্বিমত করেননি বলে জানা যায়।

বিষয়টি স্বীকার করে জিয়া উদ্দীন বাবলু গতকাল বলেন, ‘এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমরা সংসদের ভেতরে ও বাইরে সত্যিকার অর্থে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চাই।’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই আর মহাজোটে নেই। ২০১৮ সালে ২০টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দিলেও দু-একটি আসনে প্রার্থিতা ওপেন ছিল এবং সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।’ জাপার এই অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি সাম্প্রতিককালে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেওয়া বক্তব্যে জি এম কাদের দাবি করেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন আর মহাজোটে নেই। কোনো জোটেই নেই। নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে জাতীয় পার্টি মাঠে আছে।’ ‘জাতীয় পার্টি কারো দয়া বা ভিক্ষার রাজনীতি করে না’—এমন কথাও বলেন তিনি। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সুপার পাওয়ার হয়ে গেছে।’

জাপার সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা দলে নতুন এ ধরনের আলোচনার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আলোচনা হলেও কোন দিকে টার্ন নেয় সেটি দেখার বিষয়। কারণ আমরা মহাজোটের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তা ছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সেদিন (গত শনিবারের বৈঠক) উপস্থিত ছিলেন না।’

৭৭ বছর বয়সী সাবেক ফার্স্ট লেডি রওশন এরশাদ শারীরিক অসুস্থতার কারণে দলীয় কর্মসূচিতে এখন আর যান না। সংসদেও তিনি অনুপস্থিত থাকেন। তবে তাঁর সমর্থক ক্ষুদ্র একটি অংশ দলের মধ্যে এখনো কিছুটা তৎপর রয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। আগে দলের বড় একটি অংশ রওশনের সমর্থক থাকলেও চেয়ারম্যান হওয়ার পরে জি এম কাদের নানাভাবে তাঁদের পক্ষে আনতে পেরেছেন।

জাপার নিয়ন্ত্রণ এখন পরিপূর্ণভাবে তাঁর হাতে রয়েছে বলেই মনে করা হয়।

জানতে চাইলে জি এম কাদের অবশ্য দলের নতুন এই অবস্থান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘এমপিদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আমরা এখন থেকে সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকব।’ তাঁর মতে, ‘সংসদের ভেতরে ও বাইরে জাতীয় পার্টির নেতাদের কথায় জনমনে একটা পারসেপশন তৈরি হয়েছে—আমরা বিরোধী দল কি-না। এই ধারণা দূর করার জন্য সবাইকে বলা হয়েছে। সরকারি দলের সঙ্গে এখন থেকে আমাদের আর কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।’

সংসদের ভেতরে ও বাইরে সরকারি দলের পক্ষে জাতীয় পার্টির অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি গত এক দশকের রাজনীতিতে বেশ আলোচিত। বস্তুত ২০০৮ সাল থেকে মহাজোটের শরিক হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে দলটির এই অবস্থান তৈরি হয়েছে। নবম ও দশম সংসদে সরকারি দলের সদস্যদের সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে জাতীয় পার্টি। একাদশ সংসদেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ সংসদ অধিবেশনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যদের বক্তব্য মিলেমিশে একাকার হতে দেখা গেছে।

একাদশ সংসদের কার্যক্রম নিয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ—টিআইবি। তাদের দেওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলটির দ্বিমুখী ও পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। দলের পরস্পরবিরোধী এই ভূমিকায় খোদ জাপার সংসদ সদস্যদের মধ্যেই ক্ষোভ রয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলে বসেছি, এটা হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়,আমাদের কারো কারো বক্তব্যে বোঝা যায় না আমরা কোন দলের সদস্য। দলের অনেক সদস্য জাতীয় পার্টির ও দলের চেয়ারম্যান এরশাদ সাহেবের নাম উচ্চারণ করেন না।’

এর আগে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি জাপার ২১ সংসদ সদস্যকে নিয়ে বনানী কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন জি এম কাদের। ওই বৈঠকে সরকারে থাকা-না থাকা নিয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। তবে বেশির ভাগ সংসদ সদস্য সরকারে থাকার পক্ষে মত দেন। ফলে ওই সময় সরকারের সঙ্গ ছাড়ার বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।

ভোটের রাজনীতিতে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে আছে জাতীয় পার্টি। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে সরাসরি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকেই অংশ নিয়েছিল জাতীয় পার্টি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনেও এরশাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে হয়। সে সময় দলটির নেতাদের অনেকের কথায় সেই অস্বস্তির বিষয়টি চাপা থাকেনি।

সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ২২টি আসন নিয়ে বিরোধী দলে বসেছে জাতীয় পার্টি।

এরশাদের মৃত্যুর পর রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবে এ নিয়ে বিশ্লেষকদের আগে থেকেই নানা মত ছিল। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর ভাই জি এম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। এরশাদের মাথার ওপর জেনারেল মঞ্জুর হত্যার মামলার খড়্গ ঝুলে থাকলেও কাদেরের ক্ষেত্রে এ রকম কিছু নেই।