সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ৩০০ দিনের বেশি বন্দী রাখার পর দুজন বন্দীকে সাময়িক মুক্তি দিয়েছে সৌদি আরব। তাঁরা সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক।কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মুক্তিপ্রাপ্ত দুজন হলেন সালাহ আল-হায়দার ও বদর আল-ইব্রাহিম। তাঁদের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি চালানো একাধিক মানবাধিকার গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, সালাহ আল-হায়দার শীর্ষস্থানীয় নারী অধিকারকর্মীর সন্তান। বদর আল-ইব্রাহিম লেখক ও চিকিৎসক। তাঁদের বিচার চলছে। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার তাঁদের সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ফ্রিডম ইনিশিয়েটিভের বেথানি আল হায়দারি বলেন, ‘দুজনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। যদিও অনেক দেরি করা হলো। সালাহ আল-হায়দার ও বদর আল-ইব্রাহিমকে কারাদণ্ড দেওয়া উচিত নয়। তাঁদের এই মুক্তির বিষয়টিও সাময়িক হওয়া উচিত নয়।’
সালাহ আল-হায়দার ও বদর আল-ইব্রাহিমকে ২০১৯ সালে এপ্রিল মাসে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। আগামী ৮ মার্চ তাঁদের মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। তাঁদের সৌদি আরবের বিশেষায়িত অপরাধ আদালতে (এসসিসি) হাজির হতে হবে।
বেথানি আল হায়দারি বলেন, ‘তাঁদের আটক করার পর প্রিয়জনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। মতপ্রকাশের জন্যই তাঁদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালানো হয়। শান্তিপূর্ণ ভিন্নমত প্রকাশ সন্ত্রাসী কার্যক্রম নয়।’
মানবাধিকার গ্রুপ প্রিজনার্স অব কনসায়েন্সের পক্ষ থেকেও তাঁদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা বলছে, সমালোচনাকারীদের মুখ বন্ধ করে দিতে সৌদি কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষায়িত আদালতকে ব্যবহার করছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা মার্কিন নাগরিক দুজনের শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির বিষয়টি স্বাগত জানাচ্ছি। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
গত তিন বছরে ভিন্নমতের কারণে মানবাধিকারকর্মী, ধর্মীয় নেতা, রাজপরিবারের সদস্যদের পর্যন্ত বন্দী করা হয়েছে সৌদি আরবে। ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনার পর থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সৌদি আরব। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করা হয়।
সৌদি আরবের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের। সেখান থেকে পুরোপুরি ঘুরে গেছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনমনের জন্য দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবার কথা বলেছেন বাইডেন।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যত অস্ত্র বিক্রি করেছিল, তার ৭ দশমিক ৪ শতাংশের ক্রেতা ছিল সৌদি আরব। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির হার ২৫ শতাংশে পৌঁছেছিল।