ঢাকাশুক্রবার , ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
  1. International
  2. অন্যান্য
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উৎসব
  6. খেলাধুলা
  7. চাকুরী
  8. জাতীয়
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম
  11. পরামর্শ
  12. প্রবাস
  13. ফরিদপুর
  14. বিনোদন
  15. বিয়ানীবাজার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রিজার্ভ চুরির পাঁচ বছর,অগ্রগতি নেই টাকা উদ্ধারে

অনলাইন ডেস্ক,দৈনিক ডাক বাংলা ডটকম
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১ ১:১৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পাঁচ বছর পার হয়ে গেল। অথচ চুরি হওয়া অর্থের ৫৬১ কোটি টাকা এখনো ফেরত আসেনি। সেই অর্থ ফেরত আসার কোনো আশ্বাসও মেলেনি। রিজার্ভ চুরি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনে যে মামলা চলছে, তাতেও এখন অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

তবে দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) জানিয়েছে, অর্থ উদ্ধারে ছয় মাস আগে নিউ ইয়র্কের স্টেট আদালতে আরেকটি মামলা হয়েছে, যার শুনানি শিগগিরই অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে আরো তথ্য-প্রমাণসহ একটি আপিলও করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার যায় শ্রীলঙ্কায়। বানান ভুলের কারণে ও ব্যাংকিং সিস্টেমে থাকায় তা উদ্ধার সম্ভব হয়। বাকি আট কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ফেরত আসে এক কোটি ৫০ লাখ ডলার। এখনো ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৫৬১ কোটি টাকার হদিস মিলছে না।

রিজার্ভ চুরির এ ঘটনায় প্রায় তিন বছর পর ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি (বাংলাদেশের স্থানীয় সময়) আরসিবিসির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ। ওই মামলায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) ও সে দেশের অভিযুক্ত ক্যাসিনোসহ মোট ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং তিন চীনা নাগরিককে দায়ী করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করার পরই মামলার বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট কোর্টের এখতিয়ারবহির্ভূত উল্লেখ করে পাল্টা মামলা করে আরসিবিসিসহ অন্যরা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলাটি খারিজের আবেদন জানায় তারা। চলতি বছরের ২০ মার্চ আরসিবিসির করা ওই আবেদন খারিজ করে বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত। নিউ ইয়র্কের স্টেট আদালতে মামলাটির কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিএফআইইউ সূত্রে জানা গেছে, আরো তথ্য-প্রমাণসহ ফেডারেল আদালতে আপিল করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ফেডারেল আদালতের আদেশ অনুযায়ী, স্টেট কোর্টে আরেকটি মামলা করেছে বাংলাদেশ, যার শুনানি শিগগিরই হবে বলে আশা করছে বিএফআইইউ।
জানতে চাইলে বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা স্টেট কোর্টে মামলা করেছি। আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই শুনানি হবে।’

জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টের মামলায় প্রতারণা, চুরি, রূপান্তর, ষড়যন্ত্রসহ বাংলাদেশ পাঁচটি অভিযোগ এনেছিল। এর মধ্যে ষড়যন্ত্র ছাড়া চারটি অভিযোগের রায়ই বাংলাদেশের পক্ষে আসে। আদালতের রায়ে আরো উল্লেখ হয়েছিল, এই চুরি নিউ ইয়র্কে অবস্থিত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে হয়েছিল এবং সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে জালিয়াতির মাধ্যমে পেমেন্ট অর্ডার, বিভিন্ন করেসপনডেন্ট অ্যাকাউন্টে চুরি করা অর্থের লেনদেন এবং এসব অ্যাকাউন্ট থেকে দেশের বাইরে অর্থ প্রেরণ—সবই নিউ ইয়র্কে সংঘটিত হয়েছে। তাই জনস্বার্থের দিকগুলো বিবেচনায় নিউ ইয়র্কেই এ মামলা পরিচালনার যথাযথ ফোরাম।

ফেডারেল কোর্টের এই আদেশের পরই নিউ ইয়র্কের স্টেট কোর্টে গত মে মাসের শেষের দিকে আরেকটি মামলা করে বাংলাদেশ। এ মামলায় প্রতারণা, চুরি, রূপান্তরসহ চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থের ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলারের মধ্যে পাঁচ কোটি ২০ লাখ ডলার নিয়ে ফিলিপাইনের আদালতে কমপক্ষে ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে বড় অঙ্কের অর্থ জব্দও করে রেখেছেন দেশটির আদালত। তবে এসব মামলার অগ্রগতিও তেমন নেই।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন। ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। তদন্তে দায়িত্বে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এখনো আদালতে প্রতিবেদন দিতে পারেনি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।

জানতে চাইলে সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি মিডিয়া) জিসানুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ মামলার চার্জশিট ও পুলিশ রিপোর্ট একদম প্রস্তুত। আমরা যেকোনো সময় চার্জশিট দাখিল করতে প্রস্তুত আছি। তবে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আমেরিকায়ও মামলা চলছে। আমরা যদি এখনই এই মামলায় চার্জশিট দাখিল করি, তাহলে সেই টাকা ফেরত আনতে সমস্যা হতে পারে। তাই সেই মামলার অগ্রগতি দেখে আমরা চার্জশিট দাখিল করব।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ ঘটনায় শ্রীলঙ্কা, জাপান, চীন, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশের নাগরিক জড়িত আছে, সেটা শনাক্ত হয়েছে। আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে বিদেশে যে টাকা চলে গেছে সেই টাকা ফেরত আনা।’

এর আগে রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি করে সরকার। তিনি যথাসময়ে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করলেও তা আজও প্রকাশ করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পদত্যাগ করতে হয় তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে। তিনি প্রায় ২৪ দিন এই ঘটনা গোপন রেখেছিলেন। এরপর সরিয়ে দেওয়া হয় দুই ডেপুটি গভর্নরকেও।