জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কারাগারের রোজনামচা বইটি যারা পড়েন নি কিংবা সংগ্রহ করতে পারেন নি। তাদের জন্য পর্ব আকারে অনলাইন নিউজ পোর্টাল দৈনিক ডাক বাংলার নিয়মিত উদ্দোগ করেছে। যা আজ প্রথম পর্বটি আপনাদের জন্য তুলে ধরাহলো:-
কারাগারের রোজনামচা (পর্ব-০১)
জেলে যারা যায় নাই, জেল যারা খাটে নাই – তারা জানে না জেল কি জিনিস। বাইরে থেকে মানুষের যে ধারণা জেল সম্বন্ধে ভিতরে তার একদম উল্টো। জনসাধারণ মনে করে চারিদিকে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা, ভিতরে সমস্ত কয়েদি এক সাথে থাকে, তাহা নয়। জেলের ভিতর অনেক ছোট ছোট জেল আছে। কারাগার যার একটা আলাদা দুনিয়া। এখানে আইনের ব্যয়িতে যত রকম শাস্তি আছে সকল রকম শাস্তিপ্রাপ্ত লোকই পাওয়া যায়। খুনি, ডাকাত, চোর, বদমায়েশ, পাগল – নানা রকম লোক এক যায়গায় থাকে। রাজবন্দীও আছে। আর আছে হাজতি – যাদের বিচার হয় নাই বা হতেছে, এখনো জামিন পায় নাই। এই বিচিত্র দুনিয়ায় গেলে মানুষ বুঝতে পারে কত রকম লোক দুনিয়ায় আছে। বেশিদিন না থাকলে বোঝা যায়না। তিন রকম জেল আছে। কেন্দ্রীয় কারাগার, জেলা জেল, আর সাবজেল – যেগুলি মহকুমায় আছে। জেলখানায় মানুষ, মানুষ থাকেনা – মেশিন হয়ে যায়। অনেক দোষী লোক আছে; আর অনেক নির্দোষ লোকও সাঁজা পেয়ে আজীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে। সাবজেল দুই তিন মাসের সাজাপ্রাপ্ত লোক ছাড়া রাখেনা। ডিসট্রিক্ট জেলে পাঠিয়ে দেয়। প্রায় তিন বছরের উপর জেল হলে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠাইয়া দেয়।
আমি পাঁচবার জেলে যেতে বাধ্য হয়েছি। রাজবন্দী হিসেবে জেল খেটেছি,সশ্রম কারাদণ্ডও ভোগ করতে হয়েছে।আবার হাজতি হিসেবেও জেল খাটতে হয়েছে।তাই সকল রকম কয়েদির অবস্থা নিজের জীবন দিয়ে বুঝতে পেরেছি।আমার জীবনে কী ঘটেছে তা লিখতে চাইনা,তবে জেলে কয়েদিরা কিভাবে তাদের দিন কাটায়,সেইটাই আলোচনা করব।পূর্বেই বলেছি,জেলের ভেতর অনেক ছোট ছোট জেল আছে’।জেলের কাজ কয়েদিরাই বেশি করে,আলাদা আলাদা এরিয়া আছে। হাজতিরা এক যায়গায় থাকে।সেখান থেকে তারা বের হতে পারেনা। রাজবন্দীরা আলাদা আলাদা যায়গায় থাকে।সেখান থেকে তারা বের হতে পারেনা।কয়েদিদের জন্য আলাদা যায়গা আছে।ছোট ছোট দেয়াল দিয়ে ঘেরা। তার মধ্যেই থাকতে হয়। আর একটা এড়িয়ে আছে যাকে বলা হয় সেল এরিয়া ।যেখানে জেলের মধ্যে অন্যায় করলে সাজা দিয়ে সেলে বন্ধ করে রাখা হয় ।আবার অনেক সেলে একরারিদের রাখা হয়। সেল অনেক রকমের আছে–পরে আলোচনা করব। কয়েদিদের গুণতি দিতে দিতে অবস্থা কাহিল হয়ে যায়।সকালে একবার গণনা করা হয়, লাইন বেঁধে বসিয়ে গণনা করে।জমাদাররা যখন সকালে দরজা খোলে তখন একবার,আবার দরজা খোলার পরে একবার, ১১ টার সময় একবার,সাড়ে ১২ টায় একবার,বিকালে একবার, আবার সন্ধ্যায় তালাবন্ধ করার সময় একবার। প্রত্যেকবারই কয়েদিদের জোড়া জোড়া করে বসতে হয়।কয়েদিদের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্ড আছে। কোন ওয়ার্ডে একশত,কোনটায় পঞ্চাশ,কোনটায় পঁচিশ, আবার এক এক সেলে এক একজন, কোন সেলে তিনজন,চারজন, পাঁচজনকেও বন্ধ করা হয়। তবে এক সেলে কোনোদিন দুইজনকে রাখা হয়না। কারণ,দুইজন থাকলে ব্যাভিচার করতে পারে,আর করেও থাকে।
চলবে….