প্রধানমন্ত্রী জবাব দিবেন কি?
ডক্টর তুহিন মালিক
(১) পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে ভয়াবহ ত্রুটির কারনে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে সড়কপথের হেডরুম স্ট্যান্ডার্ড মানা হয়নি এই প্রকল্পে। সেতুর উভয় প্রান্তের প্রায় ১ মিটার কম উচ্চতার কারনে ভারী যানবাহন আটকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ভয়াবহ আশংকা বিশেষজ্ঞদের। এই ত্রুটি সারাতে হলে ইতিমধ্যে নির্মিত পিলার, গার্ডার ও পাইলগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।
(২) এদিকে পদ্মা সেতুর মনিটরিং কমিটির প্রধান হচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে মনিটরিং করা হচ্ছে এই প্রকল্পের অগ্রগতি। সর্বশেষ গত ২৭শে জুন তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকের বরাতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কর্মযজ্ঞের নির্দেশনা দিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এসব প্রকল্পের কাজে কোনো প্রকার দুর্নীতি, অনিয়ম, ঢিলেমি বরদাশত করা হবে না। তাদেরকে এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং কাজের অগ্রগতি নিয়ে মনিটরিং কমিটি প্রতি তিন মাস অন্তর পর্যালোচনা সভা করে। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত থাকেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে নিবিড়ভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি তদারকি করেন। সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত জানুয়ারি মাসে।’
(৩) অর্থ্যাৎ যেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই মনিটরিং কমিটির প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানেই প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। কাজের অগ্রগতি নিয়ে মনিটরিং কমিটি প্রতি তিন মাস অন্তর পর্যালোচনা সভা করে। সেখানে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্পে এমন ত্রুটি ও চরম অব্যবস্থাপনা শুধু দুঃখজনকই নয়। বরং রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের চরম দায়িত্বহীনতারই পরিচয়। শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই নয়। মনিটরিং কমিটির প্রধান হিসেবও। এবং ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে প্রতিনিয়ত মনিটরিংরত প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবেও এর দায় এড়াতে পারেন না।
(৪) ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণে পদ্মা সেতু প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। আর এটা এখন বাড়তে বাড়তে তিন গুন। পদ্মা সেতুর প্রতিটি স্প্যানের খবর ফলাও করে প্রচার করা হলেও, কাজের বেলায় শুধুই দায়িত্বহীনতা, অব্যবস্থাপনা। সেই সুযোগে প্রকল্পের ব্যায় বৃদ্ধি। অর্থাৎ যতবেশী অব্যবস্থাপনা। যতবেশী ত্রুটি। ততবেশী প্রকল্পের ব্যায় বৃদ্ধি। আর ততবেশী দূর্নীতি।
(৫) প্রধানমন্ত্রী যদি এতটাই সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেন। তাহলে প্রকল্পের এতগুলো কাজ সমাপ্ত হওয়ার পরেও এইরকমের ভয়ানক ত্রুটি মনিটরিং কমিটির প্রধানের চোখে পড়লো না কেন? এবছরের ২৪ জানুয়ারি হেলিকপ্টার থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজের মোবাইলে যখন পদ্মা সেতুর ছবি তুলে সেই ছবি গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করেন। তখনও কিন্তু এরকম ভয়াবহ ত্রুটি নিয়েই নির্মান হচ্ছিল এই প্রকল্প! এবছরের ১২ মার্চ যখন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন, “এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হতে না হতেই ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদের ওপর দোষারোপ করেছিল দুর্নীতির। আমি সেখানে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, এখানে দুর্নীতি হয়নি। আমরা যে নিজস্ব অর্থায়নে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে পারি এই আত্মবিশ্বাসটা আমাদের আছে।” অথচ তখনও তিনি কেন জানতে পরেননি যে, উনার এই আত্মবিশ্বাসটা চরম এক অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতায় পরিপূর্ণ। আর যার মাশুল গুনতে হচ্ছে এদেশের গরীব জণগনের পকেটের পয়সা দিয়েই। প্রধানমন্ত্রী জবাব দিবেন কি?
ডক্টর তুহিন মালিক
আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ