রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম রিজেন্ট হাসপাতাল, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড, রিজেন্ট ডিসকভারি টুরস অ্যান্ড ট্রাভেল্স লিমিটেডের নামে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে ১১ কোটি দুই লাখ ২৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
রিজেন্ট হাসপাতাল ছাড়াও অস্তিত্বহীন ১২ প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৩টি ব্যাংক হিসাব খোলেন সাহেদ। এসব হিসাবে ৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা জমা ছিল। এর মধ্যে ৯০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। বর্তমানে আছে দুই কোটি চার লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণ আছে ৮০ লাখ টাকা।
সাহেদের আর্থিক জালিয়াতির ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এসব তথ্য পেয়েছে।
প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে গতকাল মঙ্গলবার উত্তরা পশ্চিম থানায় সাহেদ, মাসুদ ও অজ্ঞাত ছয় অথবা সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছে সিআইডি।
সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জিসান আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, আর্থিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে অর্থপাচার ও আত্মসাতের তথ্য পাওয়ার পর সাহেদ ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলাটি করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করে নিয়েছেন সাত কোটি ৯০ লাখ টাকা। করোনার ভুয়া পরীক্ষা এবং জাল সনদ প্রদানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তিন কোটি ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করতেই প্রধান সহযোগী মাসুদ পারভেজের মাধ্যমে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে রিজেন্ট ডিসকভারি টুরস অ্যান্ড ট্রাভেল্স লিমিটেডের নামে হিসাব খোলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি সাহেদের বিরুদ্ধে আর্থিক অপরাধের তদন্ত ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করার জন্য র্যাব চিঠি দেয় সিআইডিকে। এর আগে থেকেই অনুসন্ধানে নামে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ শাখার ফিন্যানশিয়াল ক্রাইম টিম।
অনুসন্ধানে তথ্য মেলে, অবৈধ আয় লেনদেনের সুবিধার্থে সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতাল, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড ও অন্যান্য অস্তিত্ববিহীন ১২টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৩টি ব্যাংক হিসাব খোলেন। এসব হিসাব খোলার সময় কেওয়াইসি ফরমে তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান বা স্বত্বাধিকারী হিসেবে পরিচয় দেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজ অভিযুক্ত সাহেদের পক্ষে হিসাবগুলো প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করেন। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাংক হিসাবগুলোতে নগদ টাকা জমা করা হয়েছে।
মাসুদ পারভেজের ১৫টি ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল তিন কোটি ৯৮ লাখ টাকা। তুলে নিয়েছেন তিন কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বর্তমান স্থিতি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, সাহেদের জালিয়াতির প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে মামলা করা হলেও শত কোটি টাকা জমার পর তিনি সে টাকা কোথায় সরিয়েছেন, তা মামলায় তদন্ত করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে সাহেদ বিদেশে টাকা পাচার করেছেন কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে। সিআইডির এই মামলায় শিগগিরই আদালতে সাহেদের রিমান্ডও আবেদন করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ জুলাই উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের জালিয়াতির তথ্য উঠে আসে। ১৫ জুলাই তাঁকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।