সিলেটের জকিগঞ্জের বারহাল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মহানগর যুবলীগ নেতা সুমন আহমদ ওরফে সুমন মেম্বারের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা ও পুরুষ নারীদের সরকারি ভাতার কার্ড জিম্মি করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় যুবলীগ নেতা নামধারী সুমন আহমদ ওরফে সুমন মেম্বার বিধবা মহিলাদের অগ্রণী ব্যাংক থেকে ভাতার টাকা তোলার পর নির্ধারিত এজেন্টের মাধ্যমে জোর করে সবার থেকে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেন।
এছাড়া বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর নুর নগর গ্রামের বিভিন্ন মৃত ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে ইউপি সদস্য সুমন মেম্বারের রেফারেন্স দিয়ে অগ্রণী ব্যাংক শাহগলি শাখা থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী লালই বিবি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বয়স্ক ভাতার কার্ড নেয়ার জন্য সুমন মেম্বারের এজেন্টকে ৫ শত ২ শত টাকা করে অনেক টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বয়স্ক ভাতার একটা টাকা পাইনি। আমি অনেক অসুস্থ মেম্বারের পায়ে হাতে ধরেছি কিন্তু টাকা দেয়েনি উল্টো মিলেছে হুমকি, কয়েক দিন আগে কৃষির উপর ইউনিয়ন থেকে আমার ছেলে ২ হাজার টাকা পেয়েছিল সেখান থেকেও ৫০০ টাকা মেম্বার জোর পূর্বক নিয়ে গেছেন।
আয়রুন নেছা নামের বিধবা বয়স্ক মহিলা জানান, আমি বয়স্ক ভাতার কার্ড এখনো পাইনি করোনার অনেক আগে মেম্বারকে ২ হাজার টাকা দিয়েছি এখনো কোনো টাকা পাইনি।
মুহিদপুর গ্রামের শিল্পি বেগম নামের আরেক মহিলা জানান, আমার মেয়ের প্রতিবন্ধীর তালিকায় নাম দেয়ার জন্য প্রথমে মেম্বার সুমনকে টাকা দিয়েছি। এরপর কার্ড পাওয়ার পর বলেন আরও তিন হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু তিন হাজার না দিয়ে এক হাজার দিছি। তবে এখন পর্যন্ত মেয়ের প্রতিবন্ধীর কোনো ভাতা পাইনি।
মুহিদপুর গ্রামের আরেক প্রতিবন্ধীর পিতা আব্দুল মুতলিব পাখি মিয়া জানান, আমার ছেলের প্রতিবন্ধী কার্ডের জন্য ইউপি মেম্বার সুমন ও তার পিএস সাঈদ তিন হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু আমি দেইনি এজন্য আজ পর্যন্ত আমার ছেলে প্রতিবন্ধীর কার্ড পায়নি।
একই গ্রামের কাওছারা বেগম নামে বিধবা মহিলা জানান, প্রথমে সুমন মেম্বারের মাধ্যমে টাকা দিয়ে বিধবা ভাতার কার্ড নেই এরপর যখন শাহগলি বাজার থেকে টাকা আনতে যাই প্রতিবার টাকা উত্তোলন করার পর সুমন মেম্বারের নির্ধারিত এজেন্ট গ্রাম পুলিশ আব্দুস সালামের কাছে দুই হাজার টাকা করে দিতে হয়। কেন টাকা দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে মেম্বার বলেন, প্রত্যেক অফিসারকে টাকা দিতে হবে আর না হলে আমাদের কার্ড জব্দ করা হবে সমান অভিযোগ একি গ্রামের বিধবা মহিলা গুলসানা বেগমের, ব্যাংকে থেকে টাকা উত্তোলন করার পর মেম্বারের নির্ধারিত এজেন্ট সালামের কাছে ২ হাজার টাকা দেই কেন এমনভাবে টাকা দিতে হবে প্রশ্নের জবাবে মেম্বার জানান, সরকারি বিভিন্ন অফিসারদের যদি টাকা না দেই তাহলে আর আপনারা টাকা পাবেন না এগুলো অফিসারদের টাকা।
বিভিন্ন বিধবা মহিলাদের কাছে থেকে সুমন মেম্বারের চাঁদার টাকা উত্তোলনকারী নির্ধারিত এজেন্ট বারহাল ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আব্দুস সালাম গণমাধ্যমকে সব ঘটনার সত্যতা শিকার করে জানান, যখন বিধবা মহিলাদের কাছে থেকে টাকা উত্তোলন করার সময় আসে তখন সুমন মেম্বার আমাকে ফোন দিয়ে নেন তারপর উনার নির্দেশে আমি যারা ব্যাংকে বয়স্ক ভাতা বিধবা ভাতা নিতে আসে তাদের প্রত্যেকের কারও কাছ থেকে ২ হাজার আবার কারও কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নেই তারপর আমি সব টাকা একত্রিত করে সুমন মেম্বারের কাছে দেই।
বারহাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানান, টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তিনি জানতেন না তবে গ্রাম পুলিশ সালামের কাছ থেকে শুনেছেন দুঃখ প্রকাশ করে বিষয়টির বিচার চান তিনি।
ব্যাংকে থেকে মৃত ব্যক্তিদের নামে টাকা যাওয়ার বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক শাহগলি শাখার ম্যানেজার তানজিদ আহমদ জানান, আমরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির মৃত্যু সনদ না পাবো ততক্ষণ পর্যন্ত ভাতার তালিকা থেকে নাম মুছে দিতে পারিনা। ২০১৫ সালের মৃত ব্যক্তিদের নামে ২০১৯ সালে টাকা উত্তোলিত হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক ম্যানেজার তানজিদ বলেন, আমরা মেম্বার চেয়ারম্যানদের রেফারেন্সের ভিত্তিতে টাকা দেই।
জকিগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা বিনয় জানান, বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর গ্রামের ছানাইরাম দাস, আব্দুল মান্নান, ফরিজ আলিসহ বেশ কিছু মানুষ ২০১৫ সালে ২০১৪ সালে মৃত্যু বরণ করেছেন। কিন্তু তাদের নামে ২০১৯ সালে বয়স্ক ভাতার টাকা অগ্রণী ব্যাংক শাহগলি থেকে উত্তোলন হয়েছে বিষয়টি সঠিক,কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত বিষয়টি আমরা এর সঠিক তদন্ত করছি।