রং নাম্বারে পরিচয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরেই কিশোরীর সাথে দেখা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে রাকিব হোসেন (১৮) নামের পঞ্চগড়ের এক যুবক। ওই কিশোরীর আমন্ত্রণে তার সাথে দেখা করতে গেলে কিশোরী পরিবারের মারধরের শিকার হন রাকিব। পিটিয়ে তার হাত পা ভেঙে দেয় কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা। জেলার সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের মাটিগাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
রক্তাক্ত অবস্থায় ওই তরুণীর বাড়ি থেকে রাকিবকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ। পরে রাকিবের নামেই উল্টো অপহরণ মামলা করে কিশোরীর পরিবার। মামলার আসামি হিসেবে পুলিশ হেফাজতে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে রাকিব। শুক্রবার বিকেলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে,পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের সিপাইপাড়া গ্রামের আইবুল হকের ছেলে রাকিব হোসেন পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে চাঁদপুর জেলায় কাজ করতো। করোনা পরিস্থিতিতে কয়েক মাস আগে বাড়ি ফিরে আসে। রং নাম্বারে পরিচয়ের সূত্র ধরে একই ইউনিয়নের মাটিগাড়া গ্রামের নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরীর সাথে কথা হয়। তার ডাকে গত বুধবার বিকেলে তার সঙ্গে দেখা করতে যায় রাকিব। গোয়ালপাড়া চা কারখানার কাছে কিশোরীর সঙ্গে কথা বলার সময় তা দেখে ফেলে মেয়েটির বাবা। পরে তিনি রাকিবকে ডেকে বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে নিয়ে মেয়ের সাথে কথা বলার অপরাধে ওই পরিবারের তিন চারজনে মিলে লাঠি দিয়ে রাকিবকে বেধড়ক মারপিট করে। তাদের মারপিটে রাকিবের হাত ও পা ভেঙ্গে যায়।
এক পর্যায়ে রাকিব জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে বিষয়টি পঞ্চগড় থানায় অবহিত করলে পুলিশ ওই বাড়ি থেকে রাকিবকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে উল্টো রাকিবের নামেই অপহরণ মামলা করে কিশোরীর বাবা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাকিব জানান, প্রায় এক মাস আগে রং নাম্বারে ওই তরুণীর সাথে পরিচয় হলেও কখনো দেখা হয়নি। বুধবার বিকেলে মেয়েটিই তাকে এসএমএস করে তার সাথে দেখা করতে বলে।
রাকিবের মা রোকেয়া বেগম জানান, হাসপাতালে এসে দেখি আমার ছেলের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। উল্টো তারাই আমার ছেলের নামে অপহরণ মামলা করেছে। আমরা মামলা করতে গেছি কিন্তু পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। এটা কেমন বিচার।
ওই কিশোরীর বাবা রাকিবকে মারধর এর কথা স্বীকার করে বলেন, কয়েক মাস ধরে আমার মেয়েকে মোবাইলে উত্যক্ত করেছিল রাকিব। এজন্য বাড়িতে ডেকে নিয়ে সামান্য মারধর করেছি। এরপর পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। সে আমার মেয়েকে ৩ কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়েছিলো তাই অপহরণ মামলা করেছি।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফারহানা সুলতানা মিলি বলেন, ওই রোগীর সারা শরীরেই ব্যথা রয়েছে। এক্সরে করে আমরা তার এক হাতে ফ্র্যাকচার পেয়েছি। পায়েসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে তবে ফ্র্যাকচার নেই। আমাদের এখানে অর্থোপেডিক চিকিৎসক না থাকায় তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আবু আক্কাছ আহমদ বলেন, অভিযুক্ত যুবককে বাদীর বাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। ওই তরুণীর বাবা বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা করেছেন। পুলিশি পাহারায় ওই যুবককে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাদীর বাড়ি থেকে অভিযুক্তকে উদ্ধারের পর অপহরণের মামলা কিভাবে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।