লেবানন সরকার পদত্যাগ করেছে। গত সপ্তাহে প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের পর যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়, এরই প্রেক্ষাপটে সরকারের পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন। এর আগেই তাঁর সাত সদস্যের মন্ত্রিসভার তিন সদস্য পদত্যাগ করেন। রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়—এমন যুক্তিতে তাঁরা পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর বাকি সদস্যরাও একই হুমকি দেন। তাঁদের দাবি ছিল, এই সরকারকেই পদত্যাগ করতে হবে।
দুর্নীতি মোকাবেলায় পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়ে দেশটিতে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছে সাধারণ জনগণও। আর এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
গত মঙ্গলবার লেবাননের বৈরুতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের একটি গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে ২৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও তা অনুভূত হয়। বিস্ফোরণে গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২২০ জনে। এদের মধ্যে চার বাংলাদেশিও আছে। আহতের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। গৃহহীন হয়ে পড়ে প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা।
বৈরুতবাসীর অভিযোগ, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণেই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে। এই অভিযোগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নেমেছে তারা। তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রায় প্রতিদিনই মন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন দেশটির আইন ও বিচার মন্ত্রী মেরি ক্লদে। এর আগে পদত্যাগ করেন তথ্যমন্ত্রী আবদেল সামাদ ও পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রী দামিয়ানোস কাত্তার। পদত্যাগ করেছেন পার্লামেন্টের ৯ সদস্য ও বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাও।
মেরি ক্লদে বলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। বিরাজমান ব্যবস্থায় আমার পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।’ বাকি মন্ত্রী ও এমপিদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে আইন ও বিচার মন্ত্রী জানান, এখন তিনি আগাম নির্বাচনের দাবিতে কাজ করবেন।
এদিকে গত রবিবারও বৈরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়াধাওয়ির ঘটনাও ঘটে। এতে কয়েক বিক্ষোভকারী আহত হয়।
লেবাননকে সহায়তা করার বিষয়ে গত রবিবার ভার্চুয়াল সভায় মিলিত হন বিভিন্ন দেশের নেতারা। ফ্রান্স ও জাতিসংঘের উদ্যোগে এই সভা হয়। তাতে লেবাননকে ৩০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় বিভিন্ন দেশ। এই অর্থ সরাসরি লেবানিজদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। আলাদাভাবে লেবাননকে ‘মোটা অঙ্কের’ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে কী পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে, তা তিনি উল্লেখ করেননি। আইএফএফ জানিয়েছে, তারা লেবাননকে আগের চেয়ে চার গুণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু এই সহায়তা পেতে হলে লেবাননের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অবশ্যই সংস্কার করতে হবে।
এদিকে বৈরুতের স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গুদামটির যে অংশ বিস্ফোরণ ঘটে, সেখানে প্রায় ৪৩ মিটার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তটি এখন সমুদ্রের পানিতে ভরে গেছে। গর্তের পাশেই ছিল একটি শস্যভাণ্ডার, যেটি বিস্ফোরণে ধুলার সঙ্গে মিশে যায়।