ঈদুল আজহা ও কোরবানি মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহৎ জাতীয় উৎসব। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালিত হয় এ উৎসব।
কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি ইসলামের প্রতীকী বিধানাবলির অন্যতম। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবছর কোরবানি করতেন। কোরবানিতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শর্তহীন আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে। এতে আল্লাহর ভালোবাসায় নিজের সব কিছু উৎসর্গের শিক্ষা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে রাসুল, আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ বিশ্ব জাহানের রব আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত।’(সুরা আনআম : ১৬২)
করোনায় কোরবানি করার ক্ষেত্রে সদিচ্ছা থাকা দরকার। করোনাকালে ঘরবন্দি জীবনে পানাহার, চাকরি ও ব্যবসা যেভাবে বিকল্প উপায়ে হয়েছে, তেমনি বিকল্প উপায়ে কোরবানি করতে হবে। কোরবানি কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়; এটি ওয়াজিব বিধান। পবিত্র কোরআনে সুরা কাউসারের দুই নম্বর আয়াতে, সুরা আনআমের ১৬২ নম্বর আয়াতে, সুরা হজের ৩৪ নম্বর আয়াতে ও সুরা হজের ৩৭ নম্বর আয়াতে কোরবানি সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।
এমন কোনো হাদিসের কিতাব নেই, যেখানে কোরবানি সম্পর্কে পৃথক অধ্যায় নেই। বুখারি শরিফে কোরবানি সম্পর্কে ২৯টি হাদিস আছে, মুসলিম শরিফে কোরবানি সম্পর্কে ৬২টি হাদিস আছে, তিরমিজি শরিফে কোরবানি সম্পর্কে ৩০টি হাদিস আছে, আবু দাউদে কোরবানি সম্পর্কে ৫৫টি হাদিস আছে, নাসায়ি শরিফে কোরবানি সম্পর্কে ৮৭টি হাদিস আছে, ইবনে মাজাহতে কোরবানি সম্পর্কে ৪১টি হাদিস আছে এবং হাদিসের প্রসিদ্ধ ছয়টি গ্রন্থে (সিহাহ সিত্তা) কোরবানি সম্পর্কে মোট ৩০৪টি হাদিস আছে। কাজেই সামর্থ্য থাকলে যেকোনো পরিস্থিতিতে কোরবানি করতে হবে।
করোনায় কোরবানির ১০ বিকল্প উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হলো—১. নিজের চেনাজানা ও পরিবারের সুস্থ (উপসর্গহীন) সদস্যদের নিয়ে কোরবানি করুন। নিজের পশুর কোরবানি নিজ হাতে করা সুন্নত।
২. বিত্তবানদের একাধিক গৃহকর্মী থাকে। এবার তাদের দিয়ে কোরবানির যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করুন। বাইরের লোক আনা থেকে বিরত থাকুন। নিজে অভ্যস্ত না থাকলে নিজেকে গুটিয়ে রাখুন।
৩. গরুর পরিবর্তে খাসি কোরবানি করুন। এটি নিজেরাই প্রসেস করতে পারবেন।
৪. কোরবানির পশু কিনে কোনো মাদরাসায় বা গরিব আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে দিন। তারা কোরবানি করে গোশত নিজেরা খেয়ে নেবে। গোশত খাওয়া কোরবানির অংশ নয়।
৫. বর্তমানে ঢাকায় এমন একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পশু ক্রয় করে প্রসেস করে গোশত আপনার বাড়ি পৌঁছে দেবে। এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোরবানি করুন। হজে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই কোরবানি করতে হয়।
৬. জনবলসংকট এড়াতে ঈদের পরের দুই দিন কোরবানি করুন।
৭. দিনের বেলা কোরবানির পরিবেশ না হলে ধীরে-সুস্থে রাতে কোরবানি করুন। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে কোরবানি করলে মাকরুহ হবে না।
৮. মেশিনের সাহায্যে যথাযথ নিয়মে (আল্লাহর নাম নিয়ে) কোরবানি করুন। বর্তমানে বেঙ্গল গ্রুপ সে প্রক্রিয়ায় পশু জবাই করে থাকে।
৯. সুস্থ-সবল লোকদের নিয়ে প্রতি মহল্লা ও সমাজে সরকারি বা সামাজিক ব্যবস্থাপনায় একটি ‘কোরবানি টিম’ গঠন করুন। শুধু তারাই মহল্লার কোরবানির কাজ সম্পন্ন করবে। প্রয়োজনে আগে থেকে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।
১০ উল্লিখিত বিকল্পগুলো অবলম্বন করার পরও সদিচ্ছা ও চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও ঈদুল আজহার দিন এবং এর পরের দুই দিন যদি কোরবানি করা সম্ভব না হয়, তাহলে কোরবানির অর্থমূল্য সদকা করে দিন। হিদায়া নামক কিতাবে এই বিকল্পের কথা উল্লেখ রয়েছে।
আর যেখানে পশু কোরবানি, চামড়া ছাড়ানো ও মাংস কাটাকাটি করা হবে, সেখানে কাজের শুরুতে ও শেষে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে।
যাঁরা কোরবানি, চামড়া ছাড়ানো ও মাংস কাটাকাটি করবেন, তাঁদের অবশ্যই হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক ও পায়ে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা রাবারের জুতা পরতে হবে। কাজ শুরুর আগে ও শেষে দুই হাতসহ পুরো শরীরের অনাবৃত অংশ সাবান ও হালকা গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
কোরবানির পশু, চামড়া ও খোলা মাংসের আশপাশে কোনো অবস্থাতেই হাঁচি-কাশি দেওয়া যাবে না।
কাজ শেষে যাবতীয় বর্জ্য মুখ বন্ধ করা ব্যাগে ভরে স্থানীয় প্রশাসন বা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত জায়গায় রাখতে হবে। রান্নার সময় কাঁচা মাংস নাড়াচাড়ার আগে ও পরে হাত ভালো করে সাবান ও হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। মাংস ভালোভাবে রান্না করতে হবে। সর্বোপরি সব ক্ষেত্রে সতর্কতাগুলো অবলম্বন করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।