Dhaka ০৯:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘করোনা যেন কিচ্ছু না তাগো কাছে’

পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব। নারায়ণপুর, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর, ২৬ জুলাই।

‘ক্যাল হুনি, এনের লোকজন করোনায় আক্রান্ত অইতাছে। অনেকের বাড়িতেও দেহি লাল রঙের পতাকা উড়তাছে। তবু শরীলটা দূরে রাহে না কেউ। মাস্কও পরে না। কারও মনে ডরভয় নাই। আজ ও গতকাল রোববার পশুর হাটে গিয়া দেখলাম, হেনো শরীল ঘেঁষাঘেঁষি কইরা লোকজন গরু-ছাগলের দরদাম করতাছে। হাত–ধরাধরি কইরাও হাঁটতাছে অনেকে। তাগো কাছে করোনা যেন কিচ্ছু না। কেউই সাবধান অইতাছে না। অ্যামনে চললে সামনে বিপদ আছে।’

এসব কথা বললেন ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার কলাদী এলাকায়। দু-দিন ধরে কয়েকটি কোরবানির পশুর হাটে গিয়ে নিজের এমন অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা শোনালেন তিনি।

এই উপজেলায় করোনার সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আজ সোমবার পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ১৬৭ জন। এর মধ্যে এ মাসেই সংক্রমিত হয়েছেন ৭০ জন। অসচেতনতা ও উদাসীন মনোভাবের কারণে উপজেলায় ব্যাপক হারে লোকজনের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

উপজেলার মতলব সরকারি কলেজের শিক্ষক রবিউল ইসলাম মিজি বলেন, ‘এখানকার অধিকাংশ লোকই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার অর্থ বোঝে না। বুঝলেও অনেকে তা মানতে চায় না। অনেক শিক্ষিত লোকও হাঁটার সময় তিন ফুট তো দূরের কথা, তিন ইঞ্চি দূরত্বও রাখে না। হাত–ধরাধরি করেও হাঁটে অনেকে। অনেক শিশু-কিশোর-তরুণ মাস্ক না পরে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছে। এমনকি পশুর হাটেও অভিভাবকেরা তাঁদের ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের হাবভাব দেখে মনে হয়, করোনা কোনো রোগই নয়।’

‘সেক্রেড হার্ট’ নামের স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নির্বাহী সদস্য মো. হাবিব ও আশরাফুল জাহান বলেন, অসচেতনতা ও উদাসীন মনোভাবই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা যেভাবে গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে পশু বেচাকেনা করছেন, তাতে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। পশুর হাটে ও বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে তাঁরা প্রায় প্রতিদিন প্রচার চালাচ্ছেন। স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরি করতে কয়েকটি হাট এলাকায় একাধিক মানববন্ধন কর্মসূচিরও আয়োজন করেছেন। গত কয়েক দিনে হাটবাজারে পাঁচ শতাধিক মানুষকে একটি করে মাস্ক দিয়েছেন। তবু মানুষ সচেতন ও সাবধান হচ্ছে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব গোলাম কাউসার বলেন, কোভিড-১৯–এর সংক্রমণ রোধে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবু সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন সচেতন না হলে ঈদের সময় সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। হাটেবাজারে লোকজনের মধ্যে সচেতনতা ও সাবধানতা নেই। এটি দুঃখজনক।

About Author Information

গোলাপগঞ্জে রাস্তা নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

‘করোনা যেন কিচ্ছু না তাগো কাছে’

Update Time : ০৫:৫৮:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০

পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব। নারায়ণপুর, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর, ২৬ জুলাই।

‘ক্যাল হুনি, এনের লোকজন করোনায় আক্রান্ত অইতাছে। অনেকের বাড়িতেও দেহি লাল রঙের পতাকা উড়তাছে। তবু শরীলটা দূরে রাহে না কেউ। মাস্কও পরে না। কারও মনে ডরভয় নাই। আজ ও গতকাল রোববার পশুর হাটে গিয়া দেখলাম, হেনো শরীল ঘেঁষাঘেঁষি কইরা লোকজন গরু-ছাগলের দরদাম করতাছে। হাত–ধরাধরি কইরাও হাঁটতাছে অনেকে। তাগো কাছে করোনা যেন কিচ্ছু না। কেউই সাবধান অইতাছে না। অ্যামনে চললে সামনে বিপদ আছে।’

এসব কথা বললেন ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার কলাদী এলাকায়। দু-দিন ধরে কয়েকটি কোরবানির পশুর হাটে গিয়ে নিজের এমন অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা শোনালেন তিনি।

এই উপজেলায় করোনার সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আজ সোমবার পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ১৬৭ জন। এর মধ্যে এ মাসেই সংক্রমিত হয়েছেন ৭০ জন। অসচেতনতা ও উদাসীন মনোভাবের কারণে উপজেলায় ব্যাপক হারে লোকজনের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

উপজেলার মতলব সরকারি কলেজের শিক্ষক রবিউল ইসলাম মিজি বলেন, ‘এখানকার অধিকাংশ লোকই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার অর্থ বোঝে না। বুঝলেও অনেকে তা মানতে চায় না। অনেক শিক্ষিত লোকও হাঁটার সময় তিন ফুট তো দূরের কথা, তিন ইঞ্চি দূরত্বও রাখে না। হাত–ধরাধরি করেও হাঁটে অনেকে। অনেক শিশু-কিশোর-তরুণ মাস্ক না পরে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছে। এমনকি পশুর হাটেও অভিভাবকেরা তাঁদের ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের হাবভাব দেখে মনে হয়, করোনা কোনো রোগই নয়।’

‘সেক্রেড হার্ট’ নামের স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নির্বাহী সদস্য মো. হাবিব ও আশরাফুল জাহান বলেন, অসচেতনতা ও উদাসীন মনোভাবই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা যেভাবে গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে পশু বেচাকেনা করছেন, তাতে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। পশুর হাটে ও বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে তাঁরা প্রায় প্রতিদিন প্রচার চালাচ্ছেন। স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরি করতে কয়েকটি হাট এলাকায় একাধিক মানববন্ধন কর্মসূচিরও আয়োজন করেছেন। গত কয়েক দিনে হাটবাজারে পাঁচ শতাধিক মানুষকে একটি করে মাস্ক দিয়েছেন। তবু মানুষ সচেতন ও সাবধান হচ্ছে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব গোলাম কাউসার বলেন, কোভিড-১৯–এর সংক্রমণ রোধে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবু সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন সচেতন না হলে ঈদের সময় সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। হাটেবাজারে লোকজনের মধ্যে সচেতনতা ও সাবধানতা নেই। এটি দুঃখজনক।