ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২ জুলাই ২০২০
  1. International
  2. অন্যান্য
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উৎসব
  6. খেলাধুলা
  7. চাকুরী
  8. জাতীয়
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম
  11. পরামর্শ
  12. প্রবাস
  13. ফরিদপুর
  14. বিনোদন
  15. বিয়ানীবাজার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিদেশি হ্যান্ডসাম ও লাস্যময়ী তরুণ-তরুণীরা যখন আপনার বন্ধু

Link Copied!

ইউরোপ-আমেরিকার জনশূন্য সৈকতে আছড়ে পড়া উদ্দাম ঢেউয়ের মতো ছলাৎ ছলাৎ শব্দে হেসে ওঠা স্বল্পবসনা উর্বশীর চেহারা যাদের মোহাবিষ্ট করে রাখে দিবাস্বপ্নে অথবা হলিউডের হৃদপিণ্ড কাঁপানো নায়কে যাদের মুগ্ধতা অহর্নিশি, আজকের গল্পটা তাদের জন্যেই।

আপনি এক সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক চেক করেই একদম থ-মেরে গেলেন! এক উর্বশীর ফেসবুক রিকোয়েস্ট আপনার সেলফোনের স্ক্রিন আলোকিত করে আছে। কিন্তু না! আপনি সচেতন ফেসবুক ইউজার। এটাকে ফেক আইডি ভেবে চেক করা শুরু করলেন। কিন্তু প্রফাইলে এত এত জীবন্ত ছবি আর প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ড যে আপনার মন থেকে মুহূর্তেই সন্দেহ দুর হয়ে গেলো। সন্দেহাতীতভাবে প্রতীয়মান হলো ফেসবুক আইডিটা একদম অরিজিনাল। তখন কি করবেন?
আপনি যথেষ্ট শিক্ষিত পুরুষ। সুতরাং স্মার্টলি হ্যালো লিখে মেসেঞ্জারে নক করলেন। ওপাশ থেকে জবাব আসে না। আবার হ্যালো লিখলেন। এবারো লাজবাব। এভাবে হাই/হ্যালো করতে করতে যখন উর্বশীর সাথে গল্প হওয়ার আশা ছেড়ে দিলেন তখন পেলেন সেই কাঙ্খিত রিপ্লাই! আই এ্যাম সরি, আই ওয়াজ বিজি! মেসেজ পেয়ে আপনি যারপর নাই বিগলিত হলেন। হওয়ারই কথা। এমন লাস্যময়ীর এত বিনয় আর আগ্রহ কার না ভালো লাগে? রাত-দিন ফেসবুকে চলতে থাকে রঙিন জীবনের গল্পগুলো।

একই সময়ে ঢাকার মিরপুর বা উত্তরার কোনো এক সম্ভান্ত নারীও কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুক চালানো শুরু করেছেন। তিনিও এক বিদেশি ড্যাম-স্মার্ট তরুণের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেয়ে কম্পিত হৃদয়ে সেটি একসেপ্ট করলেন। এক পর্যায়ে তাদেরও গল্পের খই ফুটতে থাকে মেসেঞ্জারে। জীবনের গল্প, চাওয়া-পাওয়া, ভালো অনুভূতি সব শেয়ার করা শেষ। মনের মতো বন্ধু পেলে কে না ধন্য হয় বলুন?

এভাবে বিজ্ঞাপনের সেই কাছে আসার গল্পের মতো সম্পর্ক মধুর হতে থাকে। রঙিন, বর্ণিল স্মৃতিগুলো পেরিয়ে ছবি বিনিময় শেষে গল্প মোড় নেয় প্রশস্ত হৃদয়ের সরু রাস্তায়। দুটি হৃদয় কাছাকাছি এলো, বন্ধুত্ব হলো কিন্তু তার স্মারক হিসেবে নূন্যতম একটা গিফট তো দেওয়াই যায়।
বিদেশিদের টাকা পয়সার অভাব নাই। তাই মার্কিন সেনাবাহিনীর লাস্যময়ী তরুণী আপনাকে একটা গিফট পাঠাতে চান। ভাবতে পারবেন কত মিলিয়ন ডলার হতে পারে গিফটের অর্থমূল্য? আপনার জন্য বিগ সারপ্রাইজ দেবে আপনার মার্কিন বান্ধবী তবু আপনার ঠিকানায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে লেটেস্ট মডেলের আইফোন, আইপ্যাড, ডলার, পাউন্ডসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিস থাকবে বলে আপনাকে একটু টাচ দিয়ে রেখেছেন।

গিফট পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য গিফটের ছবি তুলে এবং ভিডিও করে আপনাকে দেখালেন তিনি। আপনি বিদেশি বন্ধুর এহেন পাগলামীতে আপ্লুত হলেন। মনে মনে ভাববেন একজন মানুষ গিফট পাঠালে সমস্যা কি?

আনন্দে, উত্তেজনায় রাতে আপনার ঠিকমতো ঘুম হয়না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল। সত্যিই গিফট পাঠাবেন তো? এমন যখন অবস্থা, এক থেকে দুইদিন পরেই ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আপনাকে ফোন করে আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে ‌বলে জানানো হলো। আহ! তাহলে তো মিথ্যা বলেনি লাস্যময়ী!

তারা সেই পার্সেলের একটি ছবি আপনার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে পাঠালেন এবং ফোনের অপর পাশের ব্যক্তিটি যে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করেন তার প্রমাণ স্বরুপ আইডি কার্ডের একটি ছবি পাঠালেন। বাহ। সবকিছু মিলে যাচ্ছে।

কিন্তু আপনি তো জানেন, বিদেশ থেকে মূল্যবান উপহার আসতে গেলে সরকারকে ট্যক্স-খাজনা দিতে হয়। এজন্য বিমানবন্দর থেকে কাস্টমস অফিসার আপনাকে ফোনে জানালেন আপনার নামে পাঠানো বক্সে মূল্যবান সামগ্রী এবং কিছু ডলার-পাউন্ড আছে । আপনার বিদেশি বন্ধু এই জিনিসগুলো পাঠানোর সময় কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স বাবদ অর্থ পরিশোধ করেন নাই। আপনাকে এই বক্সটি নিতে হলে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স বাবদ নগদ ৬০ হাজার টাকা দিতে হবে। আপনি বিষয়টি বিদেশি বন্ধুকে জানালে তিনি সরি বললেন। জানালেন ব্যস্ততার কারণে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স করতে পারেননি। কিন্তু তিনি বললেন, বক্সে অনেক পাউন্ড আছে, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স করে নেওয়ার পরেই তুমি সেখান থেকে এই অর্থ গুলি পরিশোধ করতে পারবে। আপাতত তুমি ধার করে হলেও ওদেরকে টাকা দিয়ে দাও।

আনন্দে, উত্তেজনায় আপনার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পাওয়ার দশা। আপনি দ্রুত টাকাগুলো পরিশোধ করলেন। এবার কাস্টমস কর্মকর্তা বললেন আপনার পার্সেল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং একটি বড় মেশিনে সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে।

আপনি জেনে অবাক হলেন গিফট বক্সে ৫০ হাজারের অধিক পাউন্ড আছে মানে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা! কিন্তু দুঃখজনক হলো এটা এয়ারপোর্ট অথরিটির নজরে পড়েছে এবং এই অর্থ সন্ত্রাসবাদের কাজে ব্যবহৃত হবে না মর্মে এন্টি টেরোরিজম সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। এই সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য আপনি দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ করে অবশেষে সার্টিফিকেট হাতে পেলেন! শুধু তাই নয়। আপনি জাতিসংঘের সনদ, ইন্টারপোলের সনদ ইত্যাদি সনদ দেওয়ার জন্য আরো ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকাও খরচ করে ফেললেন! এত টাকা খরচ করেও আপনি তো বহু টাকার মালিক হতে যাচ্ছেন। সমস্যা কি কিছু খরচ করলে? মোটের ওপর তো আপনারই লাভ হচ্ছে।

কাস্টমস, এয়ারপোর্ট, সনদ সব ধাপ শেষ। এবার বক্স আসার পালা। গিফট হাতে পাওয়ার প্রচণ্ড বাসনা আপনার সময়কে প্রায় থামিয়ে দিয়েছে কিন্তু গিফট বক্স আসছে না। আর ধৈর্য ধারণ করা সম্ভব নয়। এবার ফোন করলেন কুরিয়ার সার্ভিসের সেই নম্বরে। একবার দুবার তিনবার চারবার….। নম্বর বন্ধ পাচ্ছেন। ভাবলেন হয়তো নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু যখন সত্যিই আর কোনদিন ওই নম্বর চালু পেলেন না, ততক্ষণে আপনি প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো ঋণী হয়ে গেছেন। মিরপুরের সেই ভদ্রমহিলাও তার সব গহনা, জমানো টাকা আর ধারের টাকার চিন্তা করতে করতে ইতোমধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি!

তাহলে কি আপনি প্রতারণার শিকার হলেন? আপনার লাস্যময়ী উর্বশী বা হার্টথ্রুব তরুণ-তরুণী তাহলে প্রতারক চক্রের সদস্য ছিলো?

অভিজ্ঞতা বলছে, স্বল্প অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোভী মানুষদের জ্বীনের বাদশার টোপ দেওয়া হয়, আর আপনি ইংরেজি জানা স্মার্ট মানুষ হলে আপনার সাথে ঘটতে পারে আলোচ্য ঘটনাটি।

চলুন, শুনে আসি এ ঘটনায় কি বলেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান ডিবির এডিসি মোহাম্মদ জুনায়েদ আলম সরকার বলছেন, প্রতারকরা এইভাবে ছলে-বলে-কৌশলে গিফট পাঠানোর নাম করে আপনাকে প্রলোভিত করে আপনার কাছ থেকে আপনার কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নেবে। প্রকৃতপক্ষে এয়ারপোর্টে কোন গিফটই আসে না।

তিনি বলেন, আপনাকে প্রতারিত করার জন্যই আপনার বিদেশি বন্ধু এবং তার এ দেশীয় সহযোগীরাই পুরো বিষয়টি সাজায়। বিদেশি বন্ধুর পাঠানো গিফট এর বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে, বিকাশ নাম্বারে টাকা প্রদানে বিরত থাকুন।

তিনি আরো জানান, এই প্রতারক চক্রের মূল কারিগর কিছু অসাধু নাইজেরিয়া নাগরিক এবং তাদের সহযোগিতায় থাকে তাদের মনোনীত বাংলাদেশি এজেন্ট।

তিনি বলেন, ব্যাপক গণসচেতনতাই পারে এ ধরনের প্রতারণা রুখতে। ওদের পাতানো ফাঁদে পা দেওয়ার আগে দশবার ভাবুন। নিজে সচেতন হোন এবং অন্যকেও সচেতন করুন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবসময় আপনার পাশে।