ঢাকাশনিবার , ২০ জুন ২০২০
  1. International
  2. অন্যান্য
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উৎসব
  6. খেলাধুলা
  7. চাকুরী
  8. জাতীয়
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম
  11. পরামর্শ
  12. প্রবাস
  13. ফরিদপুর
  14. বিনোদন
  15. বিয়ানীবাজার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সিলেটে চেম্বারে নেই ডাক্তার, ভরসা টেলিমেডিসিন

Link Copied!

সিলেটে প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। ঢাকায় প্রাইভেট চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম কিছুটা শুরু করলেও সিলেটের চিকিৎসকরা এখনো দিয়ে যাচ্ছেন টেলিমেডিসিন সেবা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটে করোনায় আক্রান্তদের বড় একটি অংশ চিকিৎসকরা রয়েছেন। এছাড়া চেম্বারে পাইভেট চিকিৎসা সেবায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বেশ কঠিন বিধায় এই কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, সিলেটে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিনের দেহে। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এরপর থেকেই সিলেটের ডাক্তার পাড়ায় নেমে আসে বড় আতঙ্ক। বিকেল থেকে শুরু করে রাত অবধি যেসব চিকিৎসকরা প্রাইভেট রোগী দেখতেন তাদের অনেকেই একে একে করে বন্ধ করে দেন চেম্বার। একপর্যায়ে এই চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে পড়ে।

এতে করে চিকিৎসকরা বিকল্প উপায়ে সিলেটের মানুষকে দেয়া শুরু করেন চিকিৎসাসেবা। সরাসরি রোগী না দেখে টেলিফোনের মাধ্যমে রোগের আলামত শুনে চালিয়ে যাচ্ছেন এই কার্যক্রম।

জানা গেছে, সম্প্রতি সিলেটের কিছু চিকিৎসক প্রাইভেট রোগী দেখা শুরু করলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, সিলেটে করোনার ভয়াবহ বিস্তার লাভ করছে। ইতিমধ্যে সিলেটের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশেন (বিএমএ) সিলেট শাখার সভাপতি ডা. রোকন উদ্দিন আহমদ দৈনিক ডাক বাংলাকে বলেন, প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার ক্ষেত্রে ওয়েটিং রুমে ( অপেক্ষমাণ কক্ষ) সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অনেক কঠিন। তিনি বলেন, এক সাথে অনেক রোগী ও সাথে অন্য লোকজন আসার ফলে মানুষের মাঝে করোনার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া যারা চেম্বারে রোগী দেখেন তাদের বেশীরভাগই সিনিয়র চিকিৎসক। অর্থাৎ বয়স্ক। বয়স্ক লোকের এমনিতেই করোনার ঝুঁকি বেশি থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশেন (বিএমএ), সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদসহ অন্যরা সিলেটে টেলিমেডিসিন সেবা চালিয়ে যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার রোকন দৈনিন ডাক বাংলাকে জানান, সিলেটের সকল চিকিৎসকের এটেনডেন্সদের আমাদের বলে রাখা আছে,কোন রোগী যদি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ফোন নাম্বার চান তাহলে নাম্বার দেয়ার জন্য। এতে করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রয়োজনে রোগীর ছবি দেখে চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, সিলেটে বিএমএ, ওসমানী মেডিকেল কলেজ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ও ড্যাব ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা চালিয়ে চাচ্ছে।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষায়িত টেলিমেডিসিন সেবায় ৬টি নাম্বারে কল করে ঘর থেকেই কয়েকটি রোগের বিষয়ে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন।

এ কাজে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), সিলেট সহায়তা করছে।

শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত টেলিমেডিসিন সেবা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই সেবা পেতে হলে নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে কল করতে হবে। এর মধ্যে মেডিসিন, হৃদরোগ ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যার জন্য- ০১৭৮১৩১৩০৯৮, গাইনি ও প্রসূতিজনিত সমস্যায়- ০১৭৮৪৩১৩০৯৯, শিশু ও নবজাতকের কোনো সমস্যায়- ০১৬৬০১২৩১৩৭, সার্জারি (শনিবার থেকে সোমবার), নাক-কান-গলা (মঙ্গলবার থেকে বুধবার) ও ডার্মাটোলজি (বৃহস্পতিবার) বিষয়ক সমস্যায়- ০১৭৮৭৩১৩০৯৭ এবং অন্যান্য রোগ বিষয়ক পরামর্শের জন্য- ০১৭৬৫৮৯৯৮২৭ নম্বরে কল করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া করোনা সম্পর্কিত জিজ্ঞাসা ও চিকিৎসার তথ্যের জন্য- ০১৭৩৫৭৭২৬৮৩ নম্বরে কল করার জন্যও বলা হয়েছে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সিলেট শাখার পক্ষ থেকে ২৮ জন চিকিৎসক টেলিমেডিসিন সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ সমন্বয়ক কমিটি স্বাচিপ সিলেট শাখার আহ্বায়ক ডা. মুজিবুল হক জানান, প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত টেলিমেডিসিন টিমের চিকিৎসকদের কাছ থেকে অসংখ্য রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য ফোন আসে আমাদের নাম্বারগুলোতে।

স্বাচিপ সিলেট’র টেলিমেডিসিন টিমে যেসব চিকিৎসক রয়েছেন, তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর হলো -ডা. বাছিরুল ইসলাম টিপু ০১৭১১০৬৪৬৮৩, ডা. আবুল ফয়েজ আলী আহমদ ০১৭১২২৬২০৫৬, ডা. আদনান চৌধুরী ০১৮৫২৮৮৯১২৩, ডা. সাদিক মিয়া ০১৬১৯১৫০৮৭৫, ডা. নাহিয়ান আহমেদ চৌধুরী ০১৯১০৭৭৫৫৫৫, ডা. আরিফুর রহমান ০১৭১৫০৯২৬০০, ডা. মোবাশেরুল ইসলাম সোহাগ ০১৭১৭০২২০২৩, ডা. অরূপ রতন চৌধুরী ০১৭১৭২৭৮১৯৭, ডা. সুজন চন্দ্র পাল ০১৭৩৭০৫৩৮১০, ডা. সুনির্মল বিশ্বাস ০১৩১২৩৫৩৭১০, ডা. আরিফুর রহমান জিসান ০১৮৪১০৫১৩২৫, ডা. এএফএম আবদুল্লাহ পলাশ ০১৭১৫৮৩২২২৭, ডা. বনি ইয়ামিন খান ০১৭৪০২৩৩৯৫১, ডা. শেখ হাসিবুর রহমান ০১৫২১২৩৫৭৬২, ডা. হরোশিত বিশ্বাস ০১৮৬১৫৭৬৮২৭, ডা. মো. মাহবুব হোসেন ০১৭১২৩৩২৬৬৫, ডা. আব্দুল আউয়াল (অর্থোপেডিকস বিভাগ) ০১৭১৯২৯৯৩৭৫, ডা. ইমতিয়াজ আহমদ (অর্থোপেডিকস বিভাগ) ০১৯১১৬২৯৬৭০, ডা. মো. হাসনাত আনোয়ার (নাক-কান-গলা বিভাগ) ০১৭১০ ৪৩৭২৪৭, ডা. ইশফাক জামান সজীব (সার্জারী বিভাগ) ০১৫৩৮১১১৮০২, ডা. রাজিব দত্ত (শিশু বিভাগ) ০১৭২৩৩৬৬৪৬৫, ডা. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেবনাথ (শিশু বিভাগ) ০১৭২১২২৫৪৯৪, ডা. জহিরুল হাসান খান (সার্জারী বিভাগ) ০১৭১২১৩০৭৬২, ডা. এমদাদুর রহমান (শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ) ০১৯১১১১২৪৭৩, ডা. রনজিৎ দেবনাথ (শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ) ০১৯৯৬২২৫২৩২, ডা. মো. ফজলে বারী (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) ০১৮৭৩৬৪২৫০৮, ডা. মো. হারুনুর রশীদ (চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ) ০১৬৮০৭৯৮৮৫০ ও ডা. মুজিবুল হক (শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ) ০১৭১৬৮১২৯৯৮।

এছাড়া ডক্টর এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ( ড্যাব) ১০ সদস্যের একটি টিম সিলেটে চালিয়ে যাচ্ছে টেলিমেডিসিন সেবা। সংগঠনের সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. শাকিলুর রহমান দৈনিক ডাক বাংলাকে জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ রোগীকে ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়েছে সংগঠনটির দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। ড্যাবের পক্ষ থেকে সিলেটে ২৪ ঘণ্টা ০১৭০৬ ৮৯৪১৬৮ নাম্বারে ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিতে বলা হয়েছে।

সিলেটে টেলিমেডিসিন সেবার কার্যক্রম চালু থাকলেও অনেকে সরাসরি চিকিৎসক দেখাতে চাচ্ছেন। এ নিয়ে ইদানিং সিলেটের অনেক মানুষকে ফেসবুকে পোষ্ট করতেও দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকে পোষ্টের মাধ্যমে জানতে চাচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন চিকিৎসক চেম্বারে রোগী দেখছেন কি-না। শুক্রবার সিলেট নগরীর উপশহরের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম শিশু বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক চেম্বারে রোগী দেখছেন কি-না জানতে চেয়ে একটি পোষ্ট করেছেন ফেসবুকে। পরবর্তীতে সিলেটভিউকে তিনি জানান, তার বাচ্ছার শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিনি টেলিমেডিসিন সেবা নিলেও কোন ফল পাননি বলে জানান। তাই তিনি সরাসরি চিকিৎসকের কাছে শিশুকে নিয়ে যেতে চান।

এমতাবস্থায় সিলেটের সচেতন মহল মনে করছেন, চিকিৎসকরা প্রতিদিন নুন্যতম ১০ জন রোগী দেখলে মানুষের অনেক উপকার আসতো। প্রতি রোগীকে একটি সময় নির্ধারণ করে দিয়ে ঠিক ওই সময়ে রোগীকে আসার জন্য বলা যেতে পারে বলে সচেতন মহলের দাবি।