এবার হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফির নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নাজিরহাট বড় মাদরাসা। মাদ্রাসার মোহতামিম শায়খুল হাদিস আল্লামা আলহাজ্ব শাহ মো. ইদ্রিচ ইন্তেকাল করায় মোহতামিম পদে নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগ দেন আল্লামা শফি।
সম্প্রতি হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক থেকে হেফাজত ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরাতে শূরা সদস্যের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় মোহতামিম নিয়োগে সেই নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করেননি আল্লামা শফি। তিনি মাওলানা ছলিমুল্লাহকে মোহতামীম নিয়োগ দেন।
যা কোনমতেই মানছে না স্থানীয় লোকজন ও মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে হেফাজতের সাবেক শীর্ষ নেতা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সাথে আল্লামা শফির বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা। তিনি বর্তমান ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর বাবুনগর মাদ্রাসার মোহতামিম এবং নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার অন্যতম শূরা সদস্য।
আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাটহাজারী মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আহমদ শফি নাজিরহাট মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ছলিমুল্লাহকে নাজিরহাট মাদরাসার পরিচালক নিয়োগ দেয়ার জন্য অবৈধ সব পন্থা অবলম্বন করে আসছেন। এতে এলাকাবাসী উত্তেজিত ও বিক্ষুব্ধ। আমি বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে এখনও নিয়ন্ত্রণে রেখে শান্তি রক্ষার স্বার্থে সব প্রকার উস্কানিমূলক তৎপরতায় ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছি। আমি বলেছি, যা হবে আইন ও শুরার মাধ্যমে হবে।
কিন্তু কোন আইন ও নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে আল্লামা শফি এবং তাঁর পক্ষের লোকজন নাজিরহাট বড় মাদরাসার পরিচালক পদে নিজেদের পছন্দের মাওলানা ছলিমুল্লাহকে বসানোর তৎপরতা শুরু করে। ইতোমধ্যে আল্লামা শফি এক ভিডিও বার্তায় মাওলানা ছলিমুল্লাহকে নাজিরহাট মাদরাসার মুহতামিম নিয়োগের ঘোষণা দেন। তবে তার এই ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এ নিয়ে বৃহত্তর ফটিকছড়িবাসীর পক্ষে অভিযোগ তুলেন টিম্বার্স ব্যবসায়ী ইদ্রিছ সওদাগর, ন্যাসকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোলায়মান, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধা সংসদ এর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবুল মনসুর, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা সংরক্ষণ পরিষদ এর সভাপতি ইউছুপ আনছারি ও সেক্রেটারি আবু তাহের সওদাগর, নাজিরহাট পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্ন-আহবায়ক আলী আকবর জুনু।
অভিযোগ করা হয়, নাজিরহাট বড় মাদরাসার পরিচালক পদে আল্লামা শফির ঘোষিত মাওলানা ছলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে এহসান এস সোসাইটি নামে একটি মাল্টিপারপাস কোম্পানির মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের পাঁচ কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ রয়েছে।
তাদের দাবি, স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করে অভিযুক্ত মাওলানা ছলিমুল্লাহকেই চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া আরবিয়া নছিরুল ইসলাম নাজিরহাট বড় মাদরাসার মুহতামিম (পরিচালক) হিসেবে নিয়োগ দিতে তৎপরতা রয়েছেন।
নাজিরহাট বড় মাদরাসা সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ইউসুফ আনছারী বলেন, ১০৭ বছরের ঐহিত্যবাহী এ মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা ইদ্রিচ সদ্য প্রয়াত হলে মাদরাসার বিতর্কিত শিক্ষক ছলিমুল্লাহ কোনো নিয়মনীতির তোয়ক্কা না করে নিজেকে মুহতামীম দাবি করে জোরপূর্বক মাদরাসা পরিচালনার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সে নিয়মানুযায়ী শুরা (নীতিনির্ধারণী) বৈঠক আয়োজনে বাধা এবং শুরা সদস্যদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি প্রদান করছে।
ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ মাওলানার বিরুদ্ধে বর্তমানে অর্থ কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাতটি মামলা বিচারাধীন। ইতোপূর্বে তাকে আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে মাদরাসার দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দিয়েছিল শুরা বোর্ড।
তিনি আরও বলেন, ধর্মপ্রাণ ফটিকছড়িবাসী ছলিমুল্লাহর মতো অর্থ আত্নসাৎ মামলার আসামি, প্রতারককে ঐতিহ্যবাহী এ মাদরাসার মোহতামীম হিসেবে কখনো মেনে নেবে না।
হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, হাটহাজারী মাদরাসার পর এবার আল্লামা শফি ও তার ছেলে আনাস মাদানী নাজিরহাট মাদরাসায় নিজেদের পছন্দের লোক বসানোর তৎপরতা শুরু করেছে। অথচ নাজিরহাট বড় মাদরাসার পরিচালক শায়খুল হাদিস মোহাম্মদ ইদ্রিস সাহেব ইন্তেকাল করার পর মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ অবস্থায় শুরা পাশ কাটিয়ে আল্লামা শফি সাহেব মাওলানা ছলিমুল্লাহকেই চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নাজিরহাট বড় মাদরাসার মোহতামিম (পরিচালক) হিসেবে নিয়োগ দিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা রিসিভ না করায় আল্লামা শফির সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এমনকি তাঁর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীও ফোন রিসিভ করেননি। মেসেজ দিলেও কোন রকম সাড়া দেননি তারা। তবে আল্লামা শফীর পক্ষের কয়েকজন বলছেন, নাজিরহাট বড় মাদরাসার মুতাওয়াল্লি হিসেবে আল্লামা শফি এ সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন।
উল্লেখ্য, ফটিকছড়ি থানার অন্তর্গত নাজিরহাট পৌরসভার দীর্ঘ ১০৯ বছরের স্বনামধন্য দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্টান আল জামিয়াতুল আরবিয়া নছিরুল ইসলাম প্রকাশ নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা। উক্ত প্রতিষ্টানটি ১৩ জন বিশিষ্ট সূরা সদস্য কমিটি দ্বারা অত্যন্ত সুনামের সহিত এযাবৎ কাল পরিচালিত হইয়া আসছে। উক্ত সূরা সদস্যরা মাদ্রাসার মোহতামিম নিয়োগ ও অন্যান্য বিষয়ে পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়া থাকেন।