হাফেজ আশরাফ বিন আহমদ (রহঃ), তরুন নাশিদশিল্পী,সাউন্ড ডিজাইনার, সপ্তাহ হতে চলল আমাদের ছেড়ে চিরস্থায়ী নিবাসের পথে পাড়ি দিয়েছে।মাত্র একুশ বছর বয়সে একজন উদীয়মান তারকার বিদায় যেন একটি গোলাপ ফুটার পুর্বেই ঝরে পড়া।
সিলেটের ইসলামী সঙ্গীতাঙ্গনের এক উজ্বল তারকা প্রিয়ভাজন শালিন আহমদের সুবাদে আশরাফের সাথে আমার পরিচয়, শালিনের সাথে আমার বাসায় কয়েকদিন এসেছে, আমাদের কথা তন্ময় মনে শুনত,শান্ত,ভদ্র,লাজুক প্রকৃতির,চিন্তক এ প্রতিভার বিরহে এখনো হৃদয় ক্ষরন হচ্ছে,তার বন্ধুদের স্মৃতিচারন মুলক লেখা ইচ্ছা করে পড়িনা,মনকে প্রবোধ দিতে পারিনা বলে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের কুকিল বানিয়ে দিন,এ দোয়াই করি।
আশরাফের ইন্তেকালের পর দেশ জুড়েই শোকের আবহ তৈরী হয়েছে, তাকে নিয়ে আলেম উলামা ও ইসলামী সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে, কিছুদিন পর আশরাফ চলে যাবে বিস্মৃতির অতল গহ্বরে,এটাই দুনিয়ার রীতি।
তবে খুবই পরিতাপের বিষয়, জীবতাবস্থায় কীর্তিমান,বিদগ্ধজন,প্রতিভাবানদের এড়িয়ে চলা,তাদের অবদান স্বীকার না করা,প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা, অনেক সময় তাদের প্রতি জনগণের মনে বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রচেষ্টা করা আমাদের চরিত্র হলেও লাশ সামনে রেখে স্তুতির ফুকঝুরি উড়ানো আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
এমনি স্বভাব পরিহার করে জীবতাবস্থায় প্রত্যেকের অবদান স্বীকার করা,কর্মের মূল্যায়ন করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আশরাফদের যথাযথ মুল্যায়নের মাধ্যমেই নতুন আশরাফদের সৃষ্টি হতে পারে।
আল্লাহামদুলিল্লাহ,আমাদের দেশে বহুভাবে ইসলামের খেদমত চলছে,মসজিদ,মাদরাসা,খানকাহ,দাওয়াত তাবলীগ, তাযকিয়া,সাহিত্য, সাংবাদিকতা সহ অনেক ক্ষেত্রেই প্রসংশনীয় কাজ হচ্ছে,মুরব্বীদের তত্বাবধানে উদীয়মান তরুনরা এগিয়ে আসছে,কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য,ইসলামী সঙ্গিতাঙ্গনে আলেম উলামার পৃষ্টপোষকতা ও তত্বাবধান খুবই সীমিত,আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত আমাদের সিলেট এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে।
বলতে দ্বিধা নেই,সিলেটের ইসলামী সঙ্গীতাঙ্গনের শিল্পিরা নিজেরাই গড়ে উঠছে,প্রতিষ্টিত কোন শিল্পির নির্দেশনায় নিজ প্রতিভা বিকাশে প্রচেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে বিরল মেধায় বিকশিত শিল্পী শালীন আহমদ, মুনশিদ গড়ে তুলার নেপথ্য কারিগর এনাম বিন সিদ্দিকের কর্মতৎপরতা অনুপ্রেরণাদায়ক।
মাশাল্লাহ, আমাদের সিলেটের আহমদ আব্দুল্লাহ আজ জাতীয় শিল্পী,মুক্তাসম শব্দের গাথুনীতে পারঙ্গম আমাদের আব্দুল্লাহ আন্তর্জাতিক মানের শিল্পি হওয়ার যোগ্যতা রাখে,ইসহাক আলমগীরও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে,সুফিয়ান বিন এনাম যেন বহুমুখী প্রতিভার এক মোহনা, মুস্তাজাব আর শেখ এনাম তো নিজেদের গুনেই প্রস্ফুটিত।
মুজাহিদে মিল্লাত প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবীবুর রহমান রহঃ ছিলেন অনন্য ব্যাক্তিত্ব, যুবকদের ইসলামের দিকে আহ্বানে চুম্বক শক্তি আধুনিক ধাচের ইসলামী সঙ্গীতের প্রতি ছিল তার প্রচুর আগ্রহ,এজন্যই জামেয়া মাদানিয়া ইসলামী নাশিদ চর্চায় অনুকরণীয় ভুমিকা রেখেছে,জামেয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা সামিউর রহমান মুসার নির্দেশনায় স্নেহভাজন তারেক বিন হাবীবের তত্বাবধানে অদ্যাবধি সে ধারা অব্যাহত আছে।
কিংবদন্তি আহমেদ আব্দুল্লাহ জামেয়ার সাবেক ছাত্র।
জামেয়ার ফাজেল স্নেহভাজন শাহ মিসবাহ একজন প্রতিভাধর উপস্থাপক ও নাশিদশিল্পি।
আমার প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে জাহেদ আহমদ,ইকরামুল হক জুনায়েদ, নুর উদ্দিন, উসমান গনী,তাওহীদুর রহমান লাহীন প্রমুখদের নাশিদ পরিবেশনা শ্রোতাদের মন কাড়ে।
এছাড়াও সিলেটে অনেক প্রতিভা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,এদের সঠিক পরিচর্যা করলে সিলেট হতে পারে বাংলাদেশের ইসলামী সংস্কৃতির রাজধানী।
প্রিয় নবী (সঃ) মহাকবি হাসসান বিন সাবিতের কবিতা শুনতেন,উৎসাহ দিতেন,সে হিসাবে নাশিদ শুনা,মুনশিদকে উৎসাহ দেয়া প্রিয় নবীর সুন্নাত,আমাদের উলামায়ে কেরামের সে সুন্নাতের প্রতি যত্নশীল হওয়া সময়ের দাবী।
দ্বীনী কাজের প্রত্যেক বিভাগেই কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে,তা শুধরিয়ে দিতে হয়,বিচ্যুতির অজুহাতে ইসলামী সংস্কৃতির কর্মীদের দুরে ঠেলে দেয়াই সমাধান নয়,এতে তাদের ত্রুটি বিচ্যুতির মাত্রা বাড়তেই থাকবে।
চলমান ইসলামী নাশিদের কথায় রুহানিয়াত নেই, শিল্পিরা অহংকারী,অভিযোগের শেষ নেই,কিন্তু রুহানিয়াত সমৃদ্ধ কথার যোগানদাতা আর তাদের সাহচর্য দিয়ে বিনয়ী করার মতো মহান লোকের তো বড়ই অভাব!
তাই,এ অবস্থার নিরসনে রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য নয়,নিছক দ্বীনি স্বার্থে তরুন আলেমদের এগিয়ে আসতে হবে,আশরাফ বিন আহমদ( রহঃ) নব উদ্যমতার আলোকবর্তিকা। এটাই আমার বেদনার্ত হৃদয়ের প্রত্যাশা।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
লেখক: শাহ মমশাদ আহমদ
সিনিয়র মুহাদ্দিস জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার,সিলেট।