ঢাকাসোমবার , ১৫ জুন ২০২০
  1. International
  2. অন্যান্য
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. উৎসব
  6. খেলাধুলা
  7. চাকুরী
  8. জাতীয়
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম
  11. পরামর্শ
  12. প্রবাস
  13. ফরিদপুর
  14. বিনোদন
  15. বিয়ানীবাজার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চিকিৎসাসেবা প্রদানে অনিহায় রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘ফৌজদারি অপরাধ’

Link Copied!

চিকিৎসা না দিয়ে সাধারণ রোগীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত আদেশে বলেছেন, কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদানে অনিহা দেখালে এবং এতে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলা জনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া আদালত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যাতে কভিড ও নন-কভিড সকল রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় সেবিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে একটি মনিটরিং সেল গঠনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ আদেশ দেন। ৫টি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
করোনা মোকাবিলা সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে সকল হাসপাতাল-ক্লিনিকে আগত সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারি নির্দেশনার বাস্তবায়ন এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া, সকল বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সেন্ট্রাল বেড ব্যুরো গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে এসব রিট আবেদন দাথিল করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ডা. শেখ আল মামুনের পক্ষে অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান একটি; অ্যাডভোকেট এএম জামিউল হক, মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান ও ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান একটি; জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন একটি; ঢাকা লকডাউন চেয়ে অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল ইসলামের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ একটি এবং আরেক আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকার করা একটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে একসঙ্গে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আদেশের কপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব, স্বাস্থ্যসচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ), বাণিজ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে গত ১১ মে এবং গত ২৪ মে জারি করা নির্দেশনাসমূহ বিবেচনায় নিয়ে এসব আদেশ দেন।

আদালতের নির্দেশনা ও অভিমতসমূহ
আদালত ১১টি আদেশ ও অভিমত দেন। আদেশগুলো হলো-

১। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত উপরোক্ত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি-না এবিষয়ে একটি প্রতিবেদন আগামী ৩০ জুনের মধ্যে অত্র আদালতে দাখিলের জন্য স্বাস্থ্যসচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

২। সরকারি নির্দেশনাসমূহ পালনে ব্যর্থ ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি-না তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে।

৩। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২৪ মে জারি করা নির্দেশনা অনুসারে ওই তারিখের পর ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহে ১৫ জুন পর্যন্ত কতজন কভিড এবং নন-কভিড রোগীর চিকিৎসার প্রদান করা হয়েছে তা উল্লেখিত তারিখের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। তৎসঙ্গে ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহের একটি তালিকা প্রেরণ করতে হবে।

৪। বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাসমূহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কি-না সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের কর্তৃপক্ষকে ১৫দিন পরপর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। ওই সকল প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫দিন পরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

৫। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহের বিশেষত ঢাকা মহানগর ও জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যাতে কভিড ও নন-কভিড সকল রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা প্রদান করে, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

৬। কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদানে অনিহা দেখালে এবং এতে করে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলা জনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার প্রদত্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

৭। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজভাবে পেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোন হাসপাতালে আইসিইউতে কত জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কী অবস্থায় আছে, তার আপডেট প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসিইউ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং সেলে ভুক্তভোগীরা যাতে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য পৃথকভাবে ‘আইসিইউ হটলাইন’ নামে পৃথক হটলাইন চালু এবং হটলাইন নম্বর গুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গনমাধ্যমে বিশেষত টেলিভিশন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮। আইসিইউ-এ চিকিৎসাধীন কভিড-১৯ রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে সে বিষয়ে মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে।

৯। অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান/দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয়পত্র ব্যতীত অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

১০। সরকার এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় বর্তমান পর্যায়ে লকডাউনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া সংগত হবে না মর্মে আদালত মনে করে।

১১। দেশে বিদ্যমান সামগ্রিক পরিস্থিতি অর্থাৎ বর্তমানে দেশে বিরাজমান করোনা পরিস্থিতি একটি ‘দুর্যোগ’ বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট-২০১২ এর ধারা-১৪ অনুসারে ‘ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অরডিনেশন গ্রুপ’র কার্যক্রমকে সক্রিয় করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। ওই কমিটি কার্যকর হলে কমিটির সুপারিশের আলোকে উপরোক্ত আইনের ধারা-২৬ অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক রিকুইজিশান করা যেতে পারে।