নগদ অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় শুধু বৈধ নয়,অভাবী মানুষের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য করে তা উত্তম ও কল্যানকর। সহীহ হাদীস ও সালফে সালেহীন এর উক্তি দ্বারা বিষয়টি সুপ্রমানিত। এব্যাপারে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।
১- রাসুলে কারীম (সঃ) যখন হযরত মুয়াজ (রাঃ) কে ইয়ামন পাঠান,তখন তিনি সেখানে সাদকাতুল ফিতার গম আদায় করার পরিবর্তে কাপড় দিয়ে আদায় করেন।তিনি বলেন, এরুপ আদায় করা তোমাদের জন্য সহজ। তা ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সঃ) মহিলাদের কে তাদের অলংকার দিয়ে সাদাকা আদায় করতে বলেছেন। (সহীহ বুখারী)
২-আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুল (সঃ) এর যুগে ঈদুল ফিতরের দিনে এক সা’ খাদ্য বের করে দিতাম। তখন আমাদের খাদ্য ছিল,যব,কিশমিশ,পনির ও খেজুর।( বুখারী)
এ খাদ্যগুলো সাদাকা ফিতর আদায়ের ক্ষেত্রে মানদণ্ড, এর যে কোন একটি দ্বারা যেমন আদায় করা যায়,এর সমমুল্যের যে কোন দ্রব্য ও মুদ্রা দ্বারাও আদায় করা যায়।এছাড়া মুল্য দিয়ে আদায় হবেনা মর্মে কোন প্রমাণ নেই বিধায় সমমুল্যের টাকা দিয়ে ফিতরা দেয়া অবশ্যই জায়েজ হবে।
৩- সাদাকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা যাবে এটি ইমাম বুখারীরও(রহঃ)অভিমত। তিনি এব্যাপারে আলাদা অধ্যায় উল্লেখ করেছেন। (বিস্তারিত ফতহুল বারী শরহে বুখারী)
৪- হযরত যুহায়ের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু ইসহাক (রহঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন,আমি সাহাবায়ে কেরামকে এ অবস্থায় পেয়েছি, যে তারা রমজানে সাদকা ফিতর খাবারের পরিবর্তে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। (ইবনে আবি শায়বা)
৫-হযরত হাসান বসরী (রহঃ)বলেন, টাকা দ্বারা সাদকা ফিতর আদায়ের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই।( ইবনে আবি শায়বা)
৬-হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজীজ (রহঃ) প্রত্যেক ব্যাক্তির পক্ষ থেকে সাদকা ফিতর আদা সা’গম বা তার মুল্য আদা দিরহাম নির্ধারণ করেছিলেন।( ইবনে আবি শায়বা)
৭- ইমাম বায়হাকী সহ অনেক সালফে সালেহীন টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য করে উত্তম বলেছেন।
৮-শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রঃ ও দুঃস্থ মানুষের কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য করে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় জায়েয বলেছেন,(মাজমুয়া ফাতাওয়া)
৯ – সৌদি আরবের অনেক আলেম টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় নাজায়েয মনে করতেন। খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দেয়ার কারণে অনেক স্থানে চাল নেয়ার মত লোক খোঁজে পাওয়া যায়না,গরীব- মিসকিন যা ফিতরা পায় অর্ধেক মুল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হয়,এ বাস্তবতা দেখে বহুসংখ্যক আলেম পুর্বের ফতোয়া প্রত্যাহার করে হানাফি মাযহাব অনুযায়ী ফতোয়া প্রদান করছেন।
মুলত প্রত্যেক জটিল বিষয়ে ইমাম আবু হানিফা রঃ এর মতামত সুদুর প্রসারী,আরবের প্রাজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম তা অনুধাবন করতে পারছেন,যদি ওআমাদের দেশে কিছু সংখ্যক ভাই কথায় কথায় আরব আলেমদের উদ্বৃতি দিলেও নিজ মতের বিরুধী হলেই মানতে রাজী হননা,তা খুবই দুঃখজনক।
১০-হাদীসের আলোকে ফিতরার উদ্দেশ্য দুটি প্রতিয়মান হয়,১-রোজার ত্রুটির ক্ষতি পরিপুরক,২- অন্ততঃ খাদ্যের ক্ষেত্রে আর্থপীড়িতদের সাথে সমপর্যায়ের আনন্দ উপভোগ করা।
ফিতরা চাল- ডাল দিয়ে দিলে দুঃস্থদের ঘরে প্রতিদিনের মতো ঈদের দিনেও ডাল- ভাত পাক হবে, ধনীর ঘরে বিরিয়ানী! তা কি ফিতরার মুল উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? অথচ টাকা দিলে গরীবের ঘরে তার চাহিদা অনুযায়ী খাবার তৈরী করতে পারে।
পরিশেষে বলবো, ফেক্বাহ শাস্ত্রের মৌলনীতি অভাবগ্রস্তদের কল্যাণের প্রতি খেয়াল করে আসুন ফিতনা না করে আর্তপীড়িতদের পার্শ্বে দাঁড়াই।আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
লেখক:সিনয়র মুহাদ্দিস, জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজিরবাজার সিলেট।