সিলেটের ওসমানীনগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শিপন মিয়া(২৪) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। আজ বুধবার ইফতারের সময় উপজেলার পশ্চিম পৈলনপুর ইউপির ঈশাগ্রাই গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। নিহত শিপন আহমদ ঈশাগ্রাই গ্রামের আশিক মিয়া ছেলে।
আহতরা হলেন, ঈশাগ্রাই গ্রামের আশিক আলী, আশিক আলীর ছেলে রিপন আহমদ, আব্দুল হক, আব্দুস সালাম, আনহার মিয়া, নজির মিয়া ও নজির মিয়ার ছোট এক শিশু সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭জন। হতাহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে আশিক মিয়া ও আব্দুল হকের অবস্থা আশংকাজনক বলে তাদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
আজ বুধবার বিকেল থেকে ধন মেম্বারের পক্ষের এলাইচ মিয়ার সাথে আশিক মিয়ার পক্ষের ছোরাব মিয়ার মধ্যে গরুর ধান খাওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে ইফতারের ৮/১০ মিনিটি পূর্বে ধন মিয়া মেম্বারের নেতৃত্বে এক পক্ষ আশিক মিয়ার বসতবাড়িতে হামলা করলে অপর পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ সময় ধন মেম্বারের পক্ষের লোকজন শিপন আহমদকে দেশী অস্ত্র (সুলফি) দিয়ে আঘাত করলে শিপনের বুকে বিদ্ধ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে শিপন সহ উভয় পক্ষের প্রায় ১৫জন আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় শিপন আহমদে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিলে রাত সাড়ে ৭টার সময় হাসপাতালে শিপন মারা যায়।
নিহত শিপনের চাচা রানা মিয়া বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে ধন মেম্বারের সাথে আমার ভাই আশিক মিয়ার বিরোধ চলে আসছে। আমার ভাইয়ের রাস্তা ধন মেম্বার পাকা দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। আজ এলাইচ মিয়ার সাথে ছোরাব মিয়ার ঝগড়াকে কেন্দ্র করে আমার ভাইয়ের উপর হামলা করে ধন এলাইছ । এ সময় ধন মিয়া মেম্বার এলাইচের পক্ষ নিয়ে আমার ভাই ভাতিজাদের উপর হামলা চালায় ধন মিয়া নিজে ধারালো সুলফি দিয়ে আমার ভাতিজাকে আঘাত করে হত্যা করে। আমি বাধা দিয়েও ধন মিয়াকে আটকাতে পারিনি। আমি আমার ভাতিজার হত্যার বিচার চাই।
ওসমানীনগর থানার ওসি রাশেদ মোবারক দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় শিপন নামের এক যুবক নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পর মাইক্রোবাসে করে পালানোর সময় গলমুকাপন এলাকা থেকে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত ৯ জন সন্দেহবাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন নাহিদ মিয়া, ফরিদ মিয়া, শফিক মিয়া, মস্তফা মিয়া, আইছ মিয়া প্রমুখ। প্রধান আসামী ধন মিয়া সহ জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে মসজিদের ফান্ড হস্তগত করাকে কেন্দ্র করে উপজেলার পশ্চিম পৈলনপুর ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের ( ঈশাগ্রাই )ইউপি সদস্য জয়নুল হক ধন মিয়ার সাথে একই গ্রামের শিপনের পিতাসহ গ্রামের পঞ্চায়েত এর মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। কিছু দিন পূর্বে ধন মিয়া মেম্বার আশিক মিয়ার বাড়ির চলাচলের রাস্তার সামনের ভূমি নিজের দাবী করে দেয়াল নির্মাণ করে আশিক মিয়ার চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেন। ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসে। ধন মিয়া কর্তৃক মসজিদের এক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে নিয়ে গ্রামবাসি ও ধন মিয়ার মধ্যে গত ১১ ফেব্রুয়ারি মসজিদের মাঠে ওসমানীনগর থানার কয়েক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বনে সালিশি বৈঠক হয় ।পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ গেদাই মিয়ার সভাপতিত্বে সালিশি সভায় ধন মিয়া নিজের দোষ স্বীকার করে গ্রামের লোকদের কাছে করজোড় ক্ষমা চান ও মসজিদের এক লক্ষ টাকা কিস্তিতে ফেরত দিবেন বলে ওয়াদা করেন।এই পর থেকে গ্রামের অসহায় পরিবারের উপর আরও ক্ষেপে যান বলে আশিক মিয়ার ছেলে রিপন আহমেদ জানান। আশিক আলীর চলাচলের রাস্তায় ধন মেম্বারের দেয়াল নির্মাণ নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্বরা একাধিকবার বিচার সালিশ করেও বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেননি।সম্প্রতি আশিক মিয়াসহ মসজিদ কমিটি গ্রামের মসজিদের পুকুরে মাছ মারাতে গেলেও ধন মিয়া ও তার পক্ষের লোকেরা বাধা দেয় । মসজিদের মোতায়াল্লী জানান ধন মিয়ার ধারাবাহিক বাধা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে ঈশাগ্রাই গ্রামের মুসল্লিরা ইমাম সাহেবকে বিদায় দিয়ে মসজিদে যাওয়া বন্দ করে দিয়েছেন।